এফ–কমার্স উদ্যোক্তাদের রুটিন কেমন হওয়া উচিত
জান্নাতুন নাহার লিয়া নৃ বাংলাদেশ | মালদ্বীপ থেকে || বিএমএফ টেলিভিশন
উদ্যোক্তা হওয়ার আগে আমরা সবাই ভাবি আমরা স্বাধীন থাকবো।স্বাধীন উদ্যোক্তা হবো।কিন্তু মূলত আমরা যখন নিজেই নিজের বস হই তখন আর ফাঁকি দেয়ার কাউকে পাই না।
উদ্যোক্তাদের জীবনে ২৪/৭ কাজ করতে হয়।কায়িকশ্রমের বাইরেও প্রচুর ব্রেনওয়ার্ক করতে হয়। কারণ যেহেতু এফ কমার্সে অনলাইনে কাজ তাই এমনও হয় গভীর রাতে ক্লায়েন্টের মেসেজ আসে আর তা ডিল করতে হয়।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রয়োজনীয় নানা কাজ করতে হয়।তার উপর কেউ যদি উদ্যোক্তা হয় সেক্ষেত্রে তার দায় দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।
যেমন ধরুন এফ কমার্স উদ্যোক্তার দিন শুরু হয় তার ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে।
সেগুলো লিখিত কন্টেন্ট হতে পারে,ছবি হতে পারে কিংবা ভিডিও।
পেইজের সবগুলো ফিচার সঠিকভাবে ব্যবহার করাই একজন উদ্যোক্তার জন্য অত্যাবশকীয়।
তাছাড়া প্রোফাইলে আমাদের মানুষ ভরসা করে বেশি তাই প্রোফাইলটাকেও ব্যবহার করা যেতে পারে পণ্য বা সার্ভিসের মার্কেটিং করতে।
এ তো গেলো শুরুর কাজ।এর বাইরে যদি সোর্সিং বা কারখানা ভিজিট থাকে তাহলে উদ্যোক্তাকে বাইরে যেতে হয়।কাজ বুঝিয়ে,করিয়ে, গুছিয়ে আনতে হয়।কারিগরদের তাগাদা দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়।যারা সবকিছু নিজের হাতে করেন তাদের কথা অবশ্য ভিন্ন।
একজন এফ কমার্স উদ্যোক্তার সারাদিনের রুটিন কেমন হতে পারে তার সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হলো:
দৈনিক রুটিন:
১/পেইজ, গ্রুপ ও প্রোফাইলে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা
২/কন্টেন্ট (লিখিত,ছবি,ভিডিও) তৈরি করা
৩/ফটোগ্রাফি,ভিডিওগ্রাফি করা
৪/নিয়মিত লিখালিখি করা
৫/সহযাত্রী যারা একই ধরণের কাজ করে তাদের কাজ অবজারভ করে আইডিয়া জেনারেট করা
৬/কমেন্ট ও মেসেজ রিপ্লাই দেয়া
৭/অর্ডার নেয়া
৮/প্যাকেজিং করা
৯/ক্ষেত্র বিশেষে ডেলিভারি দেয়া(নিজ হাতে সবাই ডেলিভারি দেয় না)
বাইরের কাজের রুটিন:
বাইরের কাজ রোজ রোজ থাকে না। তাই বাইরের কাজকে সাপ্তাহিক কাজ হিসেবে কাউন্ট করা যায়।
১/ভেন্ডরের কাছে যাওয়া
২/কেনাকাটা করা
৩/কারখানায় যাওয়া
৪/কারিগরের সাথে কাজ নিয়ে প্ল্যান করা ও তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া
৫/ ডেলিভারি ম্যানদের সাথে মিটিং করা
৬/ সপ্তাহ শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব কষা
মাসিক কাজের রুটিন:
মাসিক রুটিনটা অপশনাল।কেউ যদি নিয়মিত কাজ করে তার জন্য রুটিন জেনারেট করা কোনো ব্যাপার না।
মাস শেষে দেখতে হয়
১/টোটাল কয়টা পারসেল গেছে।
২/কাস্টমার ফিডব্যাক কেমন
৩/টোটাল সেল কত
৪/কোনো লস হয়েছে কিনা
৫/অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় হয়েছে কিনা
বাৎসরিক রুটিন:
বাৎসরিক রুটিন হিসেবে উদ্যোগের প্রোডাক্ট সেল দেয়া যেতে পারে।কারণ একেক সিজনে একেক ধরণের প্রোডাক্টের চাহিদা থাকে। সবগুলো প্রোডাক্ট সবসময় সেল হয় না।কিছু প্রোডাক্ট থেকে যায়। সেগুলো ওয়্যারহাউজে জায়গা দখল করে রাখে তাই বছরে অন্তত ২বার সেল দিয়ে হলেও সেসব ডিক্লাটার (অপসারণ) করা উচিত।
আমি উদ্যোক্তা জীবনে কখনো সমস্যাযুক্ত পণ্য ডিস্কাউন্ট দেইনি।শুধুমাত্র দেখতে দেখতে বোর হয়ে নয়ত জায়গা নেই বলে সেল দিয়ে টাকা ক্যাশ করেছি। আমি আমার উদ্যোক্তা জীবনে নিজের আইডিয়াগুলো কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলাম।
আমি মনে করি উদ্যোক্তাদের বেশি বেশি পড়া আর লিখার চর্চা করা উচিৎ। বই আমাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আর লেখালেখির চর্চা ব্রেনস্টোর্মিং এ সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে ৫ পাতা বই পড়া, ১০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং রাখা জরুরি।
এই পড়া কিংবা লিখা আমাদের যেমন স্ট্রেস দূর করে তেমনি মনের খোরাকও যোগায়।
জান্নাতুন নাহার লিয়া
নৃ বাংলাদেশ
(মালদ্বীপ থেকে)