পুরো যুক্তরাষ্ট্রে আঘাতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন উ. কোরিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেক্স। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:০২, শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

উত্তর কোরিয়া তাদের নতুন হোয়াসং-২০ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উন্মোচন করেছে; যাকে তারা ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র’ বলে দাবি করেছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানা গেছে।

উত্তর কোরিয়া তাদের নতুন হোয়াসং-২০ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উন্মোচন করেছে; যাকে তারা ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র’ বলে দাবি করেছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানা গেছে।

একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে এই নতুন কঠিন-জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন বলেন, একমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব।

তিনি বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনীকে এমন এক অপরাজেয় বাহিনীতে রূপান্তরিত হতে হবে, যা শত্রুকে রাজনৈতিক, আদর্শিক, সামরিক ও কারিগরি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে পরাজিত করতে সক্ষম।”

কিম আরও বলেন, উত্তর কোরিয়াকে “নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার শক্তির উপর নির্ভর করে বারবার বিজয় অর্জনকারী অভিজাত সেনাবাহিনীতে” পরিণত করতে হবে।

তরল-জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায়, কঠিন-জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র বেশি মোবাইল, উপগ্রহের মাধ্যমে সনাক্ত করা কঠিন এবং অল্প সময়ে উৎক্ষেপণ সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে, হোয়াসং-২০ যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম।

কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া “অন্যায় ও আধিপত্যবাদের” বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে — যার ইঙ্গিত মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তবে তিনি সরাসরি ওয়াশিংটন বা সিওলের বিরুদ্ধে কোনো হুমকি দেননি।

তিনি অতীতে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবি পরিত্যাগ করে, তাহলে উত্তর কোরিয়া আলোচনায় আগ্রহী।

রাশিয়ার সহায়তা?
টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, একটি বিশালাকার ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাকের অংশ গোল এবং ভোঁতা, ১১-অ্যাক্সেলের একটি ট্রেলারে করে কিম ইল-সুং স্কোয়ারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর দর্শকরা স্লোগান দিচ্ছেন।

কোরিয়া ডিফেন্স নেটওয়ার্কের পরিচালক লি ইল-উ বলেন, “এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি আইসিবিএম বলে মনে হচ্ছে, যা একসঙ্গে আমেরিকার পূর্ব উপকূলে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম।”

ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞের মতে, হোয়াসং-২০ দেখতে ভারী এবং এর বড়, গোল নাক ইঙ্গিত করে যে এটি একাধিক স্বাধীনভাবে লক্ষ্য নির্ধারণযোগ্য রি-এন্ট্রি ভেহিকল (এমআইআরভি) বহন করতে পারে।

এর মানে হলো, একটি ক্ষেপণাস্ত্রেই একাধিক ওয়ারহেড থাকতে পারে, প্রতিটিকে আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে পরিচালনা করা সম্ভব — যা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

লি আরও বলেন, “আমি সন্দেহ করি, রাশিয়া হোয়াসং-২০ উন্নয়নে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করেছে।” তিনি এটিকে রাশিয়ার টোপোল-এম ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে তুলনা করেন — যা একটি কঠিন-জ্বালানি আইসিবিএম এবং যার পাল্লা ১১,০০০ কিমি (৬,৮০০ মাইল)।

তবে কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের চো হান-বুম বলেন, এই নতুন অস্ত্র নিয়ে “অতিরিক্ত অনুমান করা ঠিক হবে না”, কারণ উত্তর কোরিয়া এখনো হোয়াসং-১৯সহ তাদের আইসিবিএমগুলোর ফ্লাইট টেস্ট করেনি।

চো বলেন, রি-এন্ট্রি হিট রেজিস্ট্যান্স (পুনঃপ্রবেশের সময় উচ্চ তাপ সহ্য করতে পারা) যাচাই করার জন্য ফ্লাইট টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর কোরিয়া তাদের পাঁচ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার অধীনে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রের উন্নয়ন দ্রুততর করেছে, যা এই বছরের শেষেই শেষ হবে।

একই ভাষণে, কিম বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের “বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ চেতনা” ও “বিজয়” সেনাবাহিনীর আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করেছে।

চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা

কিম কুচকাওয়াজ দেখেন একটি বিশেষ মঞ্চ থেকে, যেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান তো লাম এবং রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভও উপস্থিত ছিলেন।

যুদ্ধে অংশ নেওয়া উত্তর কোরিয়ার সেনারা "নিরঙ্কুশ আনুগত্য" স্লোগান দিতে দিতে মার্চ করে, এবং তারা উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার পতাকা উড়াতে থাকে।

কোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজির গবেষক দো জিন-হো বলেন, “উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দৃঢ় মিত্রতা প্রদর্শন করছে।”

তিনি আরও বলেন, “মূলত, কিম ওয়াশিংটনকে বার্তা দিচ্ছেন যে উত্তর কোরিয়া এখন একটি পরমাণু-সক্ষম রাষ্ট্র, যার মর্যাদা আর পাল্টানো যাবে না।”

বিশ্লেষকরা একমত যে কিমের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত হিসেব করে দেওয়া, যাতে সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাব প্রকাশ না পায় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উসকানি না দেওয়া হয়।

দো বলেন, “কিমের বক্তব্যের পরিমিত সুর উত্তর কোরিয়ার আত্মবিশ্বাসকেই তুলে ধরে — যা তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার, রাশিয়ার সঙ্গে গভীর মিত্রতা ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।”

চো যোগ করেন, কিম চীনের, রাশিয়ার ও অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে তার স্বাভাবিক আগ্রাসী ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত ছিলেন।

এই কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়া হোয়াসং-১১এমএ নামের একটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শন করে, যা একটি হাইপারসনিক ওয়ারহেড বহন করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বড় হুমকি হতে পারে।

১,০০০ কিমি (৬২০ মাইল) পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের কিউশু অঞ্চল, এমনকি সেখানে অবস্থানরত মার্কিন নৌবাহিনীকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে বলে লি জানান।

লি বলেন, “কিমের বক্তব্য মূলত তিনটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত: আমরা পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্রের উন্নয়নে গতি বাড়াব; যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি বাড়ছে; এবং আমরা রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জোটবদ্ধ হব।”

কুচকাওয়াজের আগে, শুক্রবার পিয়ংইয়ংয়ে কিম মেদভেদেভের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ‘‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’’ শক্তিশালী করার আশা প্রকাশ করেন।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, “কিম বলেন, রুশ প্রতিনিধিদলের এই সফর, কোরিয়ান জনগণের ন্যায়সঙ্গত লক্ষ্যের প্রতি রাশিয়ান পার্টি ও জনগণের দৃঢ় সমর্থন ও সংহতির প্রতিফলন।”

তারা আরও জানায়, “তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই সফর উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত, প্রাণবন্ত এবং কৌশলগত মৈত্রীর এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”

সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়