জীবনের সহজ জিনিসগুলো কেন এত কঠিন হয়ে গেলো
শিরিন আকতার || বিএমএফ টেলিভিশন
জীবনকে জটিল করেছে প্রযুক্তি নয়, করেছে আমাদের অতিরিক্ত চাওয়া, তুলনা, ও কৃত্রিমতা।
একসময় যেসব জিনিসে সুখ ছিল—একটা হাসি, কিছু আন্তরিকতা, একটুখানি সময়—
আজ সেগুলোই সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।
কেন? হয়তো আমরা সহজভাবে বাঁচতে ভুলে গেছি।
জীবনকে জটিল করেছে প্রযুক্তি নয়, করেছে আমাদের অতিরিক্ত চাওয়া, তুলনা, ও কৃত্রিমতা।
একসময় যেসব জিনিসে সুখ ছিল—একটা হাসি, কিছু আন্তরিকতা, একটুখানি সময়—
আজ সেগুলোই সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।
কেন? হয়তো আমরা সহজভাবে বাঁচতে ভুলে গেছি।
এক সময়ের সরল সুখ
একসময় জীবন ছিল সহজ,
সকাল মানেই ছিলো শান্তি, চায়ের কাপে গল্প, প্রতিবেশীর খবর নেওয়া,
আর পরিবারের সাথে একসাথে বসে খাওয়ার আনন্দ।
সুখের সংজ্ঞা তখন ছোট ছিলো—
একটুখানি সময়, ভালোবাসা আর যত্নেই ভরে যেতো মন।
আজ সব কিছুই আছে—প্রযুক্তি, আরাম, সুযোগ—
তবুও সুখ যেন ধরা দেয় না।
একটা "তুমি কেমন আছো?" বলা এখন কঠিন,
কারণ সময় আছে ডিভাইসের জন্য, কিন্তু নেই মানুষের জন্য।
কৃত্রিমতার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মনুষ্যত্ব
আমরা এখন অনেক কিছু জানি, কিন্তু খুব কম অনুভব করি।
হাসি আছে, কিন্তু তাতে মায়া নেই;
কথা আছে, কিন্তু তাতে সত্য নেই।
মানুষ এখন সাজিয়ে বলে, মেপে ভালোবাসে,
আর সম্পর্কগুলোও হয়ে গেছে “ফিল্টার দেওয়া”।
একসময় ছোট উপহার মানে ছিলো ভালোবাসা,
আজ দাম দেখে বোঝা হয় সম্পর্কের গভীরতা।
এই পরিমিতি, এই হিসেবের জীবনই সহজ জিনিসগুলোকে কঠিন করে দিয়েছে।
সহজতা হারানোর দায় কার?
আমরা নিজেরাই জীবনের সরলতা হারিয়েছি।
চাই দ্রুত সফলতা, দ্রুত উত্তর, দ্রুত প্রশংসা।
ধৈর্য নেই, সহনশীলতা নেই, আত্মসমালোচনার শক্তি নেই।
জীবনের সবচেয়ে সহজ কাজগুলো—
কারো পাশে থাকা, মন খুলে হাসা, কৃতজ্ঞ থাকা—
এসবই এখন বিলাসিতা মনে হয়।
আমরা “বুদ্ধিমান” হয়েছি, কিন্তু “সহজ” থাকতে পারিনি।
এ কারণেই সুখ এখন কৃত্রিম, শান্তি এখন দূরের গল্প।
আবার সহজ হওয়া শেখা দরকার
জীবনকে সহজ করা মানে সরল হয়ে যাওয়া নয়,
বরং ভেতরের জট খুলে ফেলা।
একটু দয়া, একটুখানি সহমর্মিতা,
একটু সময় দেওয়া—এগুলোই জীবনকে সুন্দর করে তোলে।
আমরা যদি আবার শিখতে পারি—
চোখে চোখ রেখে কথা বলা,
ভালোবাসা প্রকাশে লজ্জা না পাওয়া,
এবং কৃতজ্ঞতার জায়গায় অভিযোগ কমানো,
তাহলেই হয়তো জীবন আবার সহজ হবে—
ঠিক যেমনটা একসময় ছিল।
“জীবনের সহজ জিনিসগুলো কখনো হারিয়ে যায় না,
হারিয়ে যায় কেবল সেগুলো দেখার আমাদের দৃষ্টি।”
শিরিন আকতার
স্বত্তাধিকারী :উড়ান
সিইও :টেস্টি বেকার্স