কুষ্টিয়া জমে উঠেছে শত বছরের পুরনো অতিহ্যবাহী লাঠি খেলা
আজিজুল ইসলামঃ || বিএমএফ টেলিভিশন
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর ও উজানগ্রাম ইউনিয়নের গজনবীপুর গ্রামে ৭ দিনের এই লাঠি খেলার উদ্বোধন করা হয়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর ও উজানগ্রাম ইউনিয়নের গজনবীপুর গ্রামে ৭ দিনের এই লাঠি খেলার উদ্বোধন করা হয়।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার খয়েরপুর ও গজনবীপুর গ্রামের মন্ডল মাতব্বরদের সম্মতি ক্রমে ৭ দিনব্যাপী এই লাঠিখেলা শুরু হয়।এই খেলার মাধ্যমে সমাজ থেকে মাদক দূর করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ঢোলের তালে তালে, লাঠিয়ালদের অঙ্গভঙ্গি ও নানা কৌশলের মাধ্যমে দর্শকদের মন মাতানো এবং এই খেলায় বিভিন্ন এলাকার শতাধিক লাঠিয়াল অংশগ্রহণ করেন।
লাঠিয়ালরা দল বেঁধে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে খেলার মাঠ বা খোলা জায়গায় তাদের কসরত দেখাচ্ছেন। সাধারণ মানুষও হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য মুগ্ধ হয়ে দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে ঘুরছে লাঠি। লাঠিয়ালদের কলা-কৌশলও নজরকাড়া। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে নানা কৌশলে লাঠি চালিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চাশ জনের এই দলে খণ্ড খণ্ড আকার হয়ে বাজনার তালে তালে লাঠির কলাকৌশল প্রদর্শন করছেন।
লাঠিয়াল মোঃ গোলো মন্ডল জানান, পারিবারিকভাবেই আমরা লাঠিখেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাপ-দাদা থেকে পাওয়া শিক্ষা এটি। ঐতিহ্যবাহী এ খেলায় যেমন দর্শকরা আনন্দ পায় তেমনি এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার নানা দিক তুলে ধরা হয়। এ থেকে নিজের আত্মরক্ষাও শেখা যায়। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এখনও টিকিয়ে রেখেছি। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ব্যবস্থাপনা জরুরি বলেও জানান তিনি।
খেলার আয়োজক কমিটির আরেক ইলিয়াস ইসলাম ও হরফ মন্ডল জানান, কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত প্রায় এ লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে হলে লাঠিয়ালদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন লাঠিয়ালদের উৎসাহ দেওয়া হয়, অন্যদিকে গ্রামবাসীদের আনন্দ দেওয়া হয়। এছাড়া নতুন প্রজন্ম এ খেলাটি সম্পর্কে জানতে পারে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
খেলায় অংশ নেওয়া সায়েদ আলী সর্দারসহ প্রবীণ লাঠিয়ালরা জানান, তারা প্রায় দুই যুগ ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা করে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরিব। তারা দুঃখ-দৈন্যে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরও বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদী।