সমাজে বিচার বেশি, বোঝাপড়া কম

শিরিন আকতার || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৪১, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২
ছবি : ফাইল ফটো

ছবি : ফাইল ফটো

সমাজে বিচার বেশি, বোঝাপড়া কম

✍️ — শিরিন আকতার

আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে কাউকে বোঝার চেয়ে বিচার করা অনেক সহজ। কেউ একটু অন্যভাবে কথা বললেই আমরা রায় দিয়ে ফেলি— “ও অহংকারী”, “ও বদলে গেছে”, “ও ভালো না।” অথচ তার জীবনের ভিতরে কী ঝড় বইছে, সেই খবর রাখার সময় বা আগ্রহ আমাদের নেই।

আমাদের সমাজ এখন এমন এক আয়না, যেখানে মানুষ নিজের মুখ না দেখে অন্যের মুখে দাগ খোঁজে। কেউ কষ্ট পেলে আমরা তাকে সান্ত্বনা না দিয়ে জিজ্ঞেস করি, “কেন এমন হলো?”, “কি করেছিলে?” — যেন কষ্ট পাওয়ারও একটা অপরাধ আছে। বিচার করা যেন এখন এক ধরণের সামাজিক বিনোদন।

একটা সময় ছিল, মানুষ পরামর্শ চাইত জ্ঞানীদের কাছ থেকে। এখন মানুষ পরামর্শ না চাইলেও মন্তব্য পেয়ে যায় সবার কাছ থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই অভ্যাসটাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। কেউ কিছু লিখলেই, কারো একটা সিদ্ধান্ত দেখলেই আমরা মন্তব্য ছুঁড়ে দিই, না ভেবে যে, হয়তো সেই সিদ্ধান্তের পেছনে আছে অনেক না বলা কষ্ট, ভয়, বা অভিজ্ঞতা।

বোঝাপড়া মানে কেবল সহানুভূতি নয় — বোঝাপড়া মানে হলো অন্যের জায়গা থেকে বিষয়টা দেখা, নিজের মানদণ্ডে না মেপে দেখা। কিন্তু আমরা সেটা ভুলে গেছি। কারণ বোঝাপড়া করতে সময় লাগে, মন লাগে, আর সবচেয়ে বেশি লাগে মানবতা। বিচার করতে এসব লাগে না — লাগে কেবল জিহ্বা আর কিছু অহংকার।

যদি সমাজে একটু বোঝাপড়া বাড়ত, তাহলে সম্পর্কের ভাঙন কমত, ভুল বোঝাবুঝি মিটে যেত, আর একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসত। কারণ প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো যন্ত্রণার ভেতর বাঁচে, কিন্তু সবাই সেটা প্রকাশ করতে পারে না। কেউ নীরব থাকে, কেউ দূরে সরে যায় — আর আমরা ভাবি, “ও বদলে গেছে।”

সমাজের এই বিচারপ্রবণতা আমাদের ভেতরের সৌন্দর্য কেড়ে নিচ্ছে। এখন সবাই নিজের ভেতরের কথা লুকিয়ে রাখে, কারণ ভয় পায়— কেউ যদি বুঝতে না পারে, বরং বিচার করে বসে! অথচ, আমরা যদি একটু থেমে শুনতাম, একটু সহমর্মী হতাম, তাহলে হয়তো পৃথিবিটা একটু কম একাকী হতো।

শেষ পর্যন্ত, সমাজ তো আমরা সবাই মিলে তৈরি করি। তাই বোঝাপড়ার দায়িত্বও আমাদের সবার।
হয়তো এখন সময় এসেছে — কম বলার, বেশি শোনার;
কম বিচার করার, বেশি বুঝে নেওয়ার।
কারণ, মানুষ ভুল করে, কিন্তু বিচার নয় — বোঝাপড়াই মানুষকে মানুষ করে তোলে। 🌿

শিরিন আকতার 
স্বত্ত্বাধিকারী : উড়ান
সি ই ও : টেস্টি বেকার্স

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়