প্রতিযোগিতা, সামাজিক চাপ ও অবহেলায় শিশু-কিশোররা হারাচ্ছে আনন্দমুখর শৈশব
ডিপ্রেশন: হারিয়ে যাওয়া শিশুদের হাসি
শিরিন আকতার || বিএমএফ টেলিভিশন
শিশু-কিশোরদের মধ্যে দ্রুত বেড়ে চলেছে ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ। পরিবার ও সমাজের অতি প্রত্যাশা, পড়াশোনার চাপ, সহপাঠীদের বুলিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলনার সংস্কৃতি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলছে। কলামে বলা হয়েছে, সন্তানদের শুধু ফলাফল দিয়ে বিচার না করে তাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে, প্রতিদিন সময় নিয়ে কথা বলতে হবে, প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকেও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
শিশু মানেই নির্ভার জীবন, খেলাধুলা আর হাসি— এমন ধারণা এখন অনেকটাই বদলে যাচ্ছে। আজকাল অনেক শিশু-কিশোরের চোখে জমে থাকে অদৃশ্য এক ক্লান্তি, যার নাম ডিপ্রেশন।
একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে কলামে বলা হয়েছে, নবম শ্রেণির ছাত্র তাহসিন (ছদ্মনাম) পড়াশোনায় ব্যর্থ হতে শুরু করলে পরিবারের চাপ, বন্ধুদের বুলিং এবং সমাজের প্রত্যাশা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। ধীরে ধীরে সে একা হয়ে যায়, চিঠিতে লেখে— “আমাকে সবাই ফলাফলের জন্য ভালোবাসে। আমি যেমন, সেই আমি-টাকে কেউ চায় না।” সৌভাগ্যক্রমে এক শিক্ষক বিষয়টি বুঝে তাকে কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে সহায়তা করেন, ফলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে।
কলামে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশু-কিশোরদের ডিপ্রেশনের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ, পারিবারিক কলহ বা দূরত্ব, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলনা, সহপাঠীদের বুলিং এবং পরিবারের অতি প্রত্যাশা।
পরিবারের করণীয়:
সন্তানের ফলাফলের চেয়ে অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া
প্রতিদিন সময় নিয়ে খোলামেলা কথা বলা
বারবার “ভালো লাগছে না” বললে গুরুত্ব দেওয়া
প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা:
স্কুল-কলেজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং সেশন এবং শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ জরুরি।
সমাজের দায়:
শিশুদের কষ্টকে তুচ্ছ না করে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে অল্প বয়সেই অনেক শিশু ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে যেতে পারে।
কলামের শেষাংশে বলা হয়, “ডিপ্রেশন বয়স দেখে আসে না। পাঁচ বছরের শিশুও ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়তে পারে। একটি আলিঙ্গন, একটি সহমর্মী বাক্য হয়তো কোনো শিশুর জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।”