সোশ্যাল মিডিয়া: আড়ম্বর নাকি আত্মপ্রবঞ্চনা?

বিএমএফ টেলিভিশন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৪৮, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

আজকের পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকেই প্রথমেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক স্ক্রল করতে শুরু করেন। কারও বিয়ের ছবি, কারও ঘুরতে যাওয়ার ভিডিও, আবার কারও নতুন পোশাক বা রেস্টুরেন্টে খাবারের পোস্ট। দেখে মনে হয়—সবার জীবন যেন সুখে, আভিজাত্যে আর রঙিনতায় ভরা। কিন্তু আসলেই কি তাই?

আজকের পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকেই প্রথমেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক স্ক্রল করতে শুরু করেন। কারও বিয়ের ছবি, কারও ঘুরতে যাওয়ার ভিডিও, আবার কারও নতুন পোশাক বা রেস্টুরেন্টে খাবারের পোস্ট। দেখে মনে হয়—সবার জীবন যেন সুখে, আভিজাত্যে আর রঙিনতায় ভরা। কিন্তু আসলেই কি তাই?

আড়ম্বরের দুনিয়া:

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা সাধারণত শুধু সুখ, সাফল্য, অর্জন বা সাজানো মুহূর্তই তুলে ধরি।

দুঃখ, ব্যর্থতা, একাকীত্ব বা কষ্ট খুব কম মানুষই শেয়ার করে।

ফলে তৈরি হয় কৃত্রিম বাস্তবতা, যেখানে মনে হয় অন্যের জীবন নিখুঁত, নিজেরটা পিছিয়ে।


উদাহরণ: আয়েশা সদ্য এইচ এস সি  পাশ করে ঢাকায় এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে,   ঢাকায় আসার পর সে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ হয়েছে, প্রতিদিন সে দেখত সহপাঠীদের ঘুরতে যাওয়া, নতুন পোশাক ও পার্টিতে অংশগ্রহণের ছবি। শুরুতে সে মনে করত—“আমার জীবন এত সাধারণ কেন?” ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস হারাতে লাগল। কিন্তু  সে বুঝতে পারছিলোনা এ এক
আত্মপ্রবঞ্চনার ফাঁদ।।

হাসিমুখ বা সাফল্যের ছবি দেখে আমরা ঈর্ষা করি, অথচ তাদের ভেতরে হতে পারে অদৃশ্য কষ্ট।

দামী খাবারের ছবি পোস্ট হলেও হতে পারে সেটা মাসশেষে কেনা।

ঘুরতে যাওয়া বা বিলাসিতার মুহূর্ত দেখলেও বাস্তবতা ভিন্ন।


সাজানো সুখ আর অদৃশ্য কষ্ট:

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন ভেসে আসে স্বামী-স্ত্রীর রোমান্টিক ছবি।
হাতে হাত রাখা, মোমবাতির আলোয় ডিনার, কিংবা সমুদ্রপাড়ে হাঁটার ছবি দেখে মনে হয়—এরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দম্পতি।

কিন্তু বাস্তব ছবিটা অনেক সময় একেবারেই আলাদা।
দিনশেষে হয়তো তারা একে অপরের খবরও জানে না। স্বামী কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে টিভি বা ফোনে ডুবে যান, স্ত্রী সংসারের চাপে ভেঙে পড়েন। তবু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সাজানো হাসিমুখ যেন বলে—“আমরা পারফেক্ট কাপল।”


মা-বাবার দিবস:  ভালোবাসা নাকি প্রদর্শন?

মা দিবস বা বাবা দিবসে সোশ্যাল মিডিয়া ভর্তি হয়ে যায় ছবি, কোলাজ আর লম্বা স্ট্যাটাসে।
ছেলে-মেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায় পুরনো ছবির অ্যালবাম ঘেঁটে মায়ের সাথে কিংবা বাবার সাথে সুন্দর মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—

সেই সন্তান কি জানে, মা গত কয়েক বছর ধরে কোন ঔষধ নিয়মিত খাচ্ছেন?

সেই সন্তান কি বোঝে, বাবা এখনো ভোরে উঠে সংসারের খরচ জোগাতে কতটা কষ্ট করেন?

স্ট্যাটাসে হাজারো লাইক আসে, কিন্তু বাস্তবে মা-বাবার সাথে আলাপের সময় কি আদৌ বের করা হয়?


ভালোবাসা যদি কেবল ছবি আর পোস্টেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা কি সত্যিকারের ভালোবাসা?

সাজানো ছবির আড়ালে সত্যিকারের সম্পর্ক:

এটাই সোশ্যাল মিডিয়ার বাস্তবতা। আমরা ছবিতে সাজাই সুখ, প্রদর্শন করি ভালোবাসা, আর বাস্তবের অদৃশ্য কষ্টকে চাপা দিয়ে রাখি।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব লুকিয়ে যায় নিখুঁত হাসির ছবিতে।

সন্তানের অবহেলা ঢাকা পড়ে মা-বাবার দিবসে দেওয়া রঙিন পোস্টে।

বন্ধুদের সাথে ভেতরে থাকা ভুল বোঝাবুঝি আড়াল করে গ্রুপ সেলফি।


অর্থাৎ, প্রদর্শনের ঝলকানিতে হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তবিক সম্পর্কের উষ্ণতা।

সমাজে প্রভাব:

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪২% তরুণ সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে নিজেদের জীবন অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন।

এর ফলে মানসিক চাপ, হীনমন্যতা ও ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

WHO বলছে—সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি তরুণদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও সামাজিক সম্পর্ক দুর্বলতার কারণ হতে পারে।

তাহলে করণীয়  কি???

*সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্টকে বাস্তবতার সঙ্গে মেলাতে হবে না।

* অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে।

*লাইক বা কমেন্টের ওপর নির্ভর না করে বাস্তব সম্পর্ক ও আত্মতৃপ্তিকে প্রাধান্য দেওয়া।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করে অযথা স্ক্রলিং কমানো।

* পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা রাখা।

*ছোট ছোট সাফল্যকে নিজে উদযাপন করা এবং নিজের জীবনকে মাপার মানদণ্ড নিজের হাতে রাখা।

শেষকথা:

সোশ্যাল মিডিয়া যদি শুধু তুলনা ও প্রদর্শনের হাতিয়ার হয়, তবে তা মানসিক শান্তি কেড়ে নেবে।
সচেতন ব্যবহার এবং বাস্তব সম্পর্ককে গুরুত্ব দিলে সোশ্যাল মিডিয়া হতে পারে শিক্ষার, যোগাযোগের এবং ইতিবাচকতার হাতিয়ার।

কারণ, প্রতিটি জীবনই মূল্যবান, প্রতিটি মুহূর্তই অনন্য।

লেখক ঃ শিরিন আকতার 
স্বত্তাধিকারী : উড়ান 
সিইও : টেস্টি বেকার্স

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়