এক নারীকে ঘিরে দুই পুরুষের টানাপোড়েন—প্রথম স্বামীর আকুতি, নতুন সঙ্গীর দাবি আর সমাজের প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি”

যশোরে থানা চত্বরে নাটকীয় টানাপোড়েন: ৩৬ বছরের সংসার ছেড়ে নতুন সম্পর্কে সীমা অধিকারী”

জহুরুল ইসলাম || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:১১, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি :  ফেসবুক থেকে নেয়া

ছবি : ফেসবুক থেকে নেয়া

যশোরে সীমা অধিকারী নামের এক নারীকে ঘিরে তৈরি হয় ত্রিমুখী টানাপোড়েন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের সংসার ও দুই সন্তানের পর তিনি অভিযোগ করেন স্বামীর দীর্ঘদিনের নির্যাতনের। অন্যদিকে স্বামী বিকাশ অধিকারী যেকোনো মূল্যে স্ত্রীকে ফেরাতে চান। এদিকে নতুন সঙ্গী পলাশ কুণ্ডুর দাবি, তাদের সম্পর্ক স্বেচ্ছামূলক এবং তিন বছরের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ হস্তক্ষেপে সীমাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং আদালতের নির্দেশে দুই পুরুষকে কারাগারে পাঠানো হয়।”


 

যশোর শহরের কোতোয়ালি থানায় ঘটলো এক চাঞ্চল্যকর দৃশ্য। এক নারীকে ঘিরে দুই পুরুষের লড়াই যেন সিনেমার কাহিনি। সীমা অধিকারী নামের ওই নারী দীর্ঘ ৩৬ বছরের সংসার ছেড়ে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পুরনো স্বামী তাকে ফেরাতে চান প্রাণপণে, আর নতুন সঙ্গী তাকে সঙ্গে রাখতে মরিয়া। শেষ পর্যন্ত থানার সামনে তৈরি হয় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি।
 

কে কে আছেন এই ঘটনার কেন্দ্রে?

 

  • সীমা অধিকারী: যিনি সংসারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নতুন জীবন শুরু করতে চান।
  • বিকাশ অধিকারী: দীর্ঘ ৩৬ বছরের স্বামী, স্ত্রীকে ফেরানোর চেষ্টা করছেন যেকোনো মূল্যে।
  • পলাশ কুণ্ডু: নতুন সঙ্গী, যাকে সীমা ভালোবেসে নাকি ভারতে বিয়ে করেছেন।
     

সীমার অভিযোগ:

সীমা জানান, বছরের পর বছর সংসারে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি এমনি এমনি ঘর ছাড়িনি। এত কষ্টে ছিলাম যে, কখনও ভেবেছি বিষ খেয়ে মরে যাই। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য হয়নি।”

স্বামীর দাবি:

বিকাশ অধিকারী বলেন, “আমরা তো ৩৬ বছর একসাথে আছি, দুইটা সন্তান আছে। আমি ওকে ছাড়িনি, ছাড়বও না। ও যা করেছে, আমি মেনে নেবো।” তবে তার অভিযোগ, সীমা ঘর ছাড়ার সময় টাকা-পয়সা ও গহনা সঙ্গে নিয়ে গেছেন।

প্রেমিকের অবস্থান:

পলাশ কুণ্ডুর দাবি, তাদের সম্পর্ক তিন বছর ধরে চলছে এবং তা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়। তিনি বলেন, “আমরা একসাথে থাকতে চাই।” পাশাপাশি অভিযোগ তোলেন, সীমার আগের পরিবার সম্পত্তির জন্য তাদের জীবননাশ করতে পারে।

থানায় টানাপোড়েন ও পরিণতি:

মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে সীমা, বিকাশ ও পলাশ—এই তিনজনকেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দিনের শেষে আদালতের নির্দেশে বিকাশ অধিকারী ও পলাশ কুণ্ডুকে কারাগারে পাঠানো হয়। সীমা অধিকারীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।


 

সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি:

এই ঘটনা শুধু পারিবারিক বিরোধ নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা, সংসারের ভাঙন এবং নতুন সম্পর্কে প্রবেশ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে এনেছে।


 

  • নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার ছাড়ার ঘটনাই প্রমাণ করে, নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা এখনো বড় প্রশ্নের মুখে।
  • দীর্ঘ সংসার ভেঙে গেলে শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, সন্তান ও পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • নারীর স্বাধীন সিদ্ধান্তকে সমাজ সহজভাবে নিতে না পারায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

যশোরের এই ঘটনা সমাজের চোখে এক প্রকার সতর্কবার্তা। ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত, পারিবারিক টানাপোড়েন ও সামাজিক চাপ—সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার শেষ হয় থানায় কিংবা আদালতে। প্রশ্ন থেকে যায়—একজন নারীর সিদ্ধান্তকে সম্মান না করলে কি এ ধরনের নাটকীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব?


 

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়