ডিপ্রেশন: পরিবারে অদৃশ্য আগুন

বিএমএফ টেলিভিশন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:৫৯, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ডিপ্রেশন কেবল একজন মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয় না, পুরো পরিবারকেও ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরের যুদ্ধটা অনেক সময় কেউ দেখতে পায় না। যখন আমরা টের পাই, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।

কলাম: ডিপ্রেশন কেবল একজন মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয় না, পুরো পরিবারকেও ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরের যুদ্ধটা অনেক সময় কেউ দেখতে পায় না। যখন আমরা টের পাই, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।

গল্প: প্রিয়জন নয়, টাকার মেশিন

ইমরান (ছদ্মনাম) ছিলেন সবার চোখে সফল মানুষ। ভালো চাকরি, সংসারে স্বচ্ছলতা, স্নেহময় স্ত্রী আর সন্তান— সবকিছু যেন ছিল ঠিকঠাক।
কিন্তু ইমরান কেপরিবার আসলেই কতটা চিনত?
সন্তানরা চাইত দামি গ্যাজেট, স্ত্রী চাইত আর্থিক নিরাপত্তা, আত্মীয়রা চাইত সাহায্য— যেন সবার চোখে তিনি কেবল “টাকার মেশিন।”
কেউ জিজ্ঞেস করেনি— তিনি কেমন আছেন? তার মন কি ক্লান্ত? তারও কি কারও কাছে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করে?

ধীরে ধীরে ইমরান চুপচাপ হয়ে গেলেন। পরিবারের হাসি-আনন্দের মাঝেই তিনি নিজেকে অচেনা লাগতে শুরু করলেন। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ খবর এলো— ইমরান  আর নেই। তিনি নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।

কিছুদিন পর তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাওয়া গেল একটি ডায়েরি। পাতায় পাতায় লেখা ছিল—
“আমাকে সবাই প্রয়োজনীয় ভাবে, কিন্তু কেউ প্রিয়জন ভাবে না।”
“আমি টাকা দিলেই মূল্যবান, আমি মানুষ হিসেবেই তুচ্ছ।”
“আমি ভীষণ ক্লান্ত।”

প্রতিটি লাইন ছিল এক নীরব আর্তনাদ। পরিবার তখন বুঝল— ভালোবাসার অভাব কতটা ভয়ংকর হতে পারে।

পরিবারের ওপর আঘাত

ইমরান এর মৃত্যু শুধু একজন মানুষকে হারানো নয়, পুরো পরিবারকে গভীর অন্ধকারে ফেলে দিল। স্ত্রী আজও অপরাধবোধে ভোগেন— “আমি যদি শুধু স্বামী নয়, মানুষটাকে বেশি গুরুত্ব দিতাম, হয়তো ও বেঁচে থাকত।” সন্তানদের চোখে বাবার হাসি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল।

কেন পরিবারই সবচেয়ে বড় আশ্রয়

ডিপ্রেশনকে থামাতে পরিবার হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে শুধু দায়িত্ব নয়, আবেগ দিয়ে দেখা জরুরি।

কেবল টাকার যোগানদার ভেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে তার অনুভূতিকে মর্যাদা দিতে হবে।

প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।


সমাজের দায়

আমাদের সমাজ এখনো মনে করে— মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করা মানে দুর্বলতা স্বীকার করা। এই ভুল ধারণাই অনেককে নীরব মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পরিবার যদি ভালোবাসা না দেয়, তবে আর কোথায় মানুষ আশ্রয় খুঁজবে?

শেষকথা

ইমরান এর  গল্প আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— অর্থ দিয়ে সম্পর্ক টিকে না, ভালোবাসা ও বোঝাপড়াই টিকিয়ে রাখে। যদি আমরা প্রিয়জনকে কেবল দায়িত্বপালনকারী বা টাকার উৎস ভেবে দেখি, তবে একদিন হয়তো তাকেও হারাতে হবে।
ডিপ্রেশনকে অবহেলা নয়, গুরুত্ব দিন। প্রতিটি মানুষকে তার “মানুষ হিসেবে” মর্যাদা দিন— কারণ ভালোবাসা ছাড়া কোনো পরিবারই পূর্ণ হয় না।


লেখক: শিরিন আকতার 
স্বত্তাধিকারী: উড়ান
সিইও: টেস্টি বেকার্স

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়