দ্বীপকে স্বর্গে রূপান্তর, প্রকৃতিকে ভালোবেসে ইতিহাস গড়েছিলেন যে সাংবাদিক
ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন
আফ্রিকার এক পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালীন ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে মাত্র ৮,০০০ পাউন্ডে সেশেলসের মাহে দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত ‘মোইন দ্বীপ’টি কিনে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ব্রেনডন গ্রিমশ। ইংল্যান্ডের ডিউসবেরির এই সাংবাদিকের চোখে ছিল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন—আর সেই স্বপ্ন নিয়েই তিনি ১৯৭৩ সালে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন পরিত্যক্ত ও নির্জন এই দ্বীপে।
আফ্রিকার এক পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালীন ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে মাত্র ৮,০০০ পাউন্ডে সেশেলসের মাহে দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত ‘মোইন দ্বীপ’টি কিনে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ব্রেনডন গ্রিমশ। ইংল্যান্ডের ডিউসবেরির এই সাংবাদিকের চোখে ছিল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন—আর সেই স্বপ্ন নিয়েই তিনি ১৯৭৩ সালে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন পরিত্যক্ত ও নির্জন এই দ্বীপে।
দ্বীপটি তখন প্রায় ৫০ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল। ঘন জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপটি বসবাসের অনুপযোগী হলেও গ্রিমশ থেমে থাকেননি। স্থানীয় এক ব্যক্তি রেনে লাফরচুনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুরু করেন দীর্ঘ ৪০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম। যার ফলে আজকের মোইন দ্বীপ হয়ে উঠেছে প্রকৃতির এক অনন্য রত্নভাণ্ডার।
সৌদি আরবের একজন রাজপুত্র ব্রেন্ডনকে ৫০ মিলিয়ন ডলার অফার করেন দ্বীপটি কিনতে। কিন্তু ব্রেন্ডন নম্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই দুই প্রকৃতিপ্রেমী একসঙ্গে হাতে করে রোপণ করেন ১৬,০০০ গাছ। যার মধ্যে রয়েছে ৭০০টিরও বেশি মহগনিগাছ, যেগুলোর উচ্চতা এখন ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত। তারা দ্বীপে তৈরি করেন প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক পথ।
রেনে লাফরচুন ২০০৭ সালে মারা গেলেও ব্রেনডন থেমে যাননি। তিনি দ্বীপে এনেছেন প্রায় ২,০০০ নতুন পাখি, যাদের দেখভালের দায়িত্বও পালন করতেন নিজেই। এছাড়া তিনি লালনপালন করেন ১২০টি বিশালাকৃতির কচ্ছপ। আজ মোইন দ্বীপে সেশেলসের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্থানীয় উদ্ভিদের দেখা মেলে।
অবাক করা বিষয় হলো, ব্রেনডন এই দ্বীপের জন্য ৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন। কারণ, তিনি চাননি এটি ধনীদের ব্যক্তিগত অবকাশযাপনের জায়গা হয়ে উঠুক। তার স্বপ্ন ছিল এটিকে একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে সবাই প্রকৃতির ছোঁয়া পাবে।
রেনে লাফরচুনের সঙ্গে ব্রেনডন
শেষমেশ, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২০০৮ সালের জুন মাসে মোইন দ্বীপকে ঘোষণা করা হয় 'ন্যাশনাল পার্ক' হিসেবে, যা এখন সাত আন মেরিন ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্ভুক্ত।
ব্রেনডন গ্রিমশ ১৯৯৬ সালে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন বই ‘A Grain of Sand’। এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু তথ্যচিত্র। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই জনপ্রিয় প্রেজেন্টার সাইমন রিভস তার ওপর নির্মাণ করেন একটি ডকুমেন্টারি।
দ্বীপে আসা পর্যটকদের জন্য ব্রেনডন ছিলেন গল্পের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার—গভীর ভালোবাসায় বলা গল্পে ছিল গুপ্তধনের রহস্য থেকে শুরু করে একটি পরিত্যক্ত দ্বীপকে স্বর্গে পরিণত করার জীবনগাথা।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে তিনি যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও শ্রম দিয়ে মোইন দ্বীপকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তা আজও প্রকৃতি ও মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। ব্রেনডন গ্রিমশ শুধু একজন সাংবাদিক বা দ্বীপবাসী নন—তিনি প্রকৃতির প্রকৃত বন্ধু। গ্রিমশ ২০১২ সালের জুলাইয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা ছিলেন। -বিবিসি