পাত্তা পেলো না পিএসজি, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন চেলসি
অনলাইন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
একদিকে ইউরোপসেরা হওয়ার গর্ব, অন্যদিকে পিএসজির তারকায় ঠাসা স্কোয়াড—সবদিক থেকেই ফুটবলবিশ্বের বড় এক প্রত্যাশার নাম ছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। কিন্তু মাঠের খেলা নামেই ‘পান্ডিত্য’ মানে না! তা ফের একবার প্রমাণ করে দিল চেলসি।
একদিকে ইউরোপসেরা হওয়ার গর্ব, অন্যদিকে পিএসজির তারকায় ঠাসা স্কোয়াড—সবদিক থেকেই ফুটবলবিশ্বের বড় এক প্রত্যাশার নাম ছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। কিন্তু মাঠের খেলা নামেই ‘পান্ডিত্য’ মানে না! তা ফের একবার প্রমাণ করে দিল চেলসি।
নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনালে বল দখলে আধিপত্য ছিল পিএসজিরই। তবে স্কোরবোর্ডে ঝলক দেখিয়েছেন চেলসির খেলোয়াড়রাই। প্রথমার্ধেই কোল পালমারের জোড়া গোল আর জোয়াও পেদ্রোর নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় চেলসি। আর সেখান থেকেই আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পুরো ৯০ মিনিট শেষে ট্রফির মঞ্চে হাসিমুখে উঠে আসে ব্লুজরা—যাদের জন্য এটা দ্বিতীয় ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা।
এই স্মরণীয় ম্যাচের দর্শকসারিতে ছিলেন স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তার সামনেই ইউরোপের রাজাদের হারিয়ে দিল একদা ব্যাকবেঞ্চে থাকা চেলসি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্লাব ফুটবলের রাজনীতিতে আজ চেলসিই নতুন কবি।
ফেভারিটের তকমা থাকায় পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে, চেলসি কোচ এনজো মারেসকা চেয়েছিলেন দাবার গুটির মতো চাল দিয়ে পিএসজির শ্রেষ্ঠত্বকে বাস্তবতা দেখাতে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। যদিও ৬৭ শতাংশ বল দখলে রেখে ৮টি শট নেয় পিএসজি। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ৬টি শট। অন্যদিকে ১০টি শট নিয়ে ৫টি লক্ষ্যে ছিল চেলসির।
ম্যাচের একদম শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবলে পিএসজির রক্ষণভাগকে তটস্থ করে রাখে চেলসি। যার সুবাদে মাত্র আট মিনিটেই ইংলিশ জায়ান্টরা লিড পেয়ে যায়। সম্প্রতি ক্লাবটিতে যোগ দিয়েই আলো ছড়াতে থাকা জোয়াও পেদ্রোর কৌশলী ফ্লিকে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে যান কোল পালমার। একেবারে ঠান্ডা মাথায় বাঁ পায়ের মাটি কামড়ানো শটে এই ইংলিশ তারকা জাল খুঁজে নেন। পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা ঝাঁপিয়ে পড়েও তার নাগাল পাননি।
এই গোলে অবশ্য পিএসজি ডিফেন্ডার নুনো মেন্ডেজের বল নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারার দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছেন গুস্তো। বল নিয়ে ছুটে বক্সের কাছে গিয়ে তিনি কাছের সতীর্থকে বাড়ান, এরপর পেদ্রো ও পালমার হয়ে বল জালে। শুরুতেই বড় ধাক্কা খাওয়া ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন পিএসজি সেটি কাটিয়ে উঠতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিল। ২৫ মিনিটে কুলিং ব্রেক থেকে ফিরে আরও উজ্জ্বীবিত চেলসি। যেন আগের গোলেরই কপি-পেস্ট করলেন পালমার। লুকাস বেরালদোকে কাটিয়ে প্রায় একই জায়গা থেকে একই কায়দায় মাটি কামড়ানো শট নেন।
এবার ইংলিশ তারকার শটে জোর ছিল। ফলে পালমারের মাটি কামড়ানো শট আগের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়েও গোললাইন অতিক্রম করতে দেখলেন দোন্নারুমা। চলতি শতকে চেলসির মাত্র তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে জোড়া গোল করলেন পালমার। আগের দুজন দিদিয়ের দ্রগবা (দু’বার) ও এডেন হ্যাজার্ড। ম্যাচের ২৯ মিনিটেই দ্বিগুণ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল পিএসজি। ৩৩ মিনিটে তারা প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ শাণায়। যদিও দেজিরে দুয়ের মাঝারি গতির শট ঠেকিয়ে দেন চেলসি গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজ। এ ছাড়া রক্ষণে ফরাসি জায়ান্টদের তেমন সুবিধা করতে দেননি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা।
এরই মাঝে ৪২তম মিনিটে আসে ম্যাচের তৃতীয় গোল। এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রো। কাউন্টার অ্যাটাকে তিনি পালমারের কাছ থেকে বল পেয়ে হালকা ড্রিবলিং করে আগুয়ান দোন্নারুমার মাথার ওপর দিয়ে পিএসজির জালে জড়িয়ে দেন। এ নিয়ে চেলসির হয়ে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে তৃতীয় গোল পেয়ে গেলেন পেদ্রো। আগের ম্যাচে জোড়া গোল করেও প্রতিপক্ষ শৈশবের ক্লাব (ফ্লুমিনেন্স) হওয়ায় উদযাপন করেননি, এবার গোল করেই মাতলেন সাম্বা নাচে। ফাইনালের মহারণে পিএসজির রক্ষণকে পুরোদমে মাটিতে নামিয়ে আনল চেলসি।
বিরতির পর গোল পেতে মরিয়া পিএসজির হয়ে দ্বিতীয় মিনিটে খিচা কাভারৎস্খেলিয়া দ্রুতগতিতে গিয়ে শট নেন। তবে সামনে ঠেলে দিয়ে বিপদ এড়ান চেলসি গোলরক্ষক। ৫২ মিনিটে উসমান দেম্বেলের নিকট দূরত্বের শটও সানচেজ ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সেভ করেন। ৫৮ মিনিটে আবারও তিনি হতাশ করেন পিএসজিকে। এবার ভিতিনহার জোরালো শট কোনোমতে হাত ছুঁয়ে বাইরে পাঠিয়েছেন। ৬৭ মিনিটে পেদ্রোকে তুলে দেলেপকে মাঠে নামান চেলসি কোচ। পরক্ষণেই আক্রমণে উঠে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন তিনি। দুর্দান্ত সেভে দোন্নারুমা এই যাত্রায় পিএসজিকে বাঁচিয়ে দেন।
৮০ মিনিটেই দেলেপের পা থেকে নিজেদের চতুর্থ গোল পেতে পারত চেলসি। পিএসজির রক্ষণ চিড়ে তিনি দোন্নারুমাকেও কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায়, কিন্তু দ্রুত শট নিতে গিয়ে গোলরক্ষকের পায়ে মেরে বসেন দেলেপ। ৮৫ মিনিটে মার্ক কুকুরেয়া চুল ধরে টেনে ফেলে দেওয়ায় ভিএআর লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত দেয় জোয়াও নেভেসের বিপক্ষে। তাকে হারিয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয় পিএসজি। সেই সুবিধা অবশ্য কাজে লাগাতে পারেনি চেলসি। উল্টো শেষদিকে গঞ্জালো রামোস পিএসজির হয়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু গোলবারে উড়ে আসা বল তিনি নিয়ন্ত্রণই করতে পারলেন না।