ইবিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা: ছাত্র সংগঠনগুলোর নিন্দার ঝড়

মো. মিনহাজুর রহমান মাহিম, ইবি প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৫, সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতাহাতির সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতাহাতির সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে হাতাহাতির এ ঘটনা ঘটে।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস ক্লাবের সদস্য ও দৈনিক শিক্ষা'র ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহ, রিপোর্টার্স ইউনিটির কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক আজকালের খবর-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম ও বার্তা-২৪-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নূর-ই আলম আহত হয়েছেন।

ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর সহ-সমন্বয়ক পংকজ রায়ের প্রেরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র নিন্দা জানায় ও সাংবাদিকদের উপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার্থে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান করি তারা যেন সাংবাদিকদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখে।”

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইবি শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সংবাদকর্মীরা সবসময় পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে আসছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের পাশে থেকেছে। কিন্তু অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে হঠাৎ করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন, এমনকি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে—যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনাটি অনভিপ্রেত ও অনিচ্ছাকৃত হতে পারে, তবে এমন পরিস্থিতিতে সকল পক্ষের সহনশীল আচরণ জরুরি। সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী পরস্পরের পরিপূরক। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতাপূর্ণ ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আমাদের প্রত্যাশা।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইবির প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবসার নবী হামযা স্বাক্ষরিত সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলীর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আহত সকলের আশু সুস্থতা ও ক্যাম্পাসের সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।”

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ইবির তথ্য-গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক হাবিব আল মিসবাহ প্রেরিত সভাপতি ইসমাইল রাহাত ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাব্বিরের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীসহ সকলের দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখতে হবে। আমরা আহত সকলের সুস্থতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকলের সচেতনতা ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।”

বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইবি শাখার প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জুনাঈদ প্রেরিত সভাপতি মো. সাদেক আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ খানের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “সাংবাদিকদের উপর হামলা দুঃখজনক এবং এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর সরাসরি আঘাত। রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। আহত সাংবাদিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা ও শিক্ষাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি।”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইবি সংসদের দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন প্রেরিত সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলমের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “ঘটনার পর, হামলাকারীরা ঘটনার দিক পরিবর্তন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি নারী শিক্ষার্থীকে ভিকটিম সাজিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালায়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়া। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখা সকলের দায়িত্ব।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস ও ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ভিডিও ধারণ করতে গেলে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনজন সাংবাদিককে মারধর করে। এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, মিনহাজ, সৌরভ সোহাগ, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর, হৃদয়সহ ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়