সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেই ভাঙতে পারে যুদ্ধবিরতি চুক্তি

আন্তর্জাতিক ডেক্স। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:০২, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে ব্যর্থ হলে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যেতে পারে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান।

আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে ব্যর্থ হলে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যেতে পারে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সীমান্তে টানা সংঘর্ষ ও প্রাণহানির পর কাতারের রাজধানী দোহায় একটি সমঝোতায় পৌঁছায় ইসলামাবাদ ও কাবুল। এই প্রেক্ষাপটেই আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে তালেবানের ওপর—তারা পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম কি না।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে যদি কোনো হামলা বা অনুপ্রবেশ ঘটে, সেটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। সবকিছুই এই একটি শর্তের ওপর নির্ভর করছে।

তিনি জানান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক এবং কাতারের অংশগ্রহণে স্বাক্ষরিত এই লিখিত চুক্তিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে—কোনো পক্ষ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “যতক্ষণ না চুক্তি লঙ্ঘন হয়, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে।”

আসিফ অভিযোগ করেন, আফগানিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং এতে আফগান তালেবানের “নীরব সমর্থন” রয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাবুল। আফগান তালেবান বলছে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে না। বরং ইসলামাবাদ আফগানিস্তান নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এবং নিজ ভূখণ্ডেই সন্ত্রাসীদের লালন করছে।

তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, দোহা বৈঠকে দুই দেশ সম্মত হয়েছে যে, তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতামূলক পদক্ষেপ নেবে না এবং কোনো পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থনও করবে না।

২০০৭ সালে গঠিত টিটিপি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর।

পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর টিটিপি প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যার লক্ষ্যে পাকিস্তান কাবুলে বিমান হামলা চালায়। তবে পরে মেহসুদ এক ভিডিও বার্তায় জীবিত থাকার প্রমাণ দেন।

এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হচ্ছিল, তাই আমরা জবাব দিয়েছি। চোখের বদলে চোখ। তারা কাবুলে আছে, সর্বত্র আছে। যেখানে থাকবে, সেখানেই আমরা আঘাত করব। কাবুল কোনো নিষিদ্ধ এলাকা নয়।

তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ২৫ অক্টোবর, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।

পাকিস্তানি সেনা সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসী হামলায় ৩১১ সেনা সদস্যসহ মোট ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার বেশিরভাগ হামলার জন্য দায়ী টিটিপি।

এ দিকে আফগান তালেবান শুধু পাকিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার করেনি, বরং সম্প্রতি একটি যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, যা ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

জাতিসংঘের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে আফগানিস্তানে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টিটিপি সদস্য অবস্থান করছে এবং তারা ন্যাটো বাহিনী রেখে যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়