আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব, শুধু কুসুমের মধু করিব পান
বিএমএফ টেলিভিশন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
বেঁচে থাকতে শুধু কুসুমের মধু পান করে বেঁচে থাকা যায় না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা সবই চাই।
বেঁচে থাকতে শুধু কুসুমের মধু পান করে বেঁচে থাকা যায় না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা সবই চাই।
যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম একটু মন টন খারাপ হলে ভাবতাম_ ইশ যদি এমন কোনো দ্বীপে চলে যেতে পারতাম,যেখানে আমাকে কেউ চেনে না। শান্তিতে থাকতাম।
ছোটোবেলায় ভাবতাম বড়ো হয়ে কোনো গ্রামে গিয়ে বসবাস করবো।
আমি ২০২৪ সালে সত্যি সত্যি একটা গ্রাম্য দ্বীপে চলে আসলাম যেটা মালদ্বীপের হাজার খানেক দ্বীপের একটা।
মালদ্বীপ মানেই ছবির মত সুন্দর একটা দেশ। এখানে নেই কোনো কোলাহল, সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি। বাতাস পরিচ্ছন্ন। মেঘমুক্ত আকাশে ঝকঝকে চাঁদ আর ঝিকিমিকি তারা দেখা যায় যা আমাদের দেশে পাহাড়ে গিয়ে দেখতে হয়।
আর দ্বীপে রয়েছে প্রতিটা বাড়িতে রং-বেরঙের ফুল। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে গাছ আর ফুলের শোভা।
এখানকার মানুষেরা দেখতে অনেকটা রক ব্যান্ডের গিটারিস্টদের মতন। কিন্তু খুব নম্র স্বভাবের আর পরোপকারী। আপনি দিনে রাতে দরজা খুলে ঘুমালেও সেফ ফিল করবেন। চোর ডাকাতের উপদ্রব নেই একদম।
প্রকৃতি যেমন সুন্দর, এখানকার মানুষদের মন মানসিকতাও তেমন। সরকারি কর্মকর্তা কিংবা নেতারাও হাতে হাতে সবার সাথে মিলে মিশে ছোট বড়ো সব ধরণের কাজ করে।সবাই মোটামুটি জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিদ্যাই জীবনের নানা পর্যায়ে লাভ করে।
যেমন: আমি একবার হস্পিটালের ম্যানেজার আর প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস ডে উৎপাদনের দিন চেয়ার টানতে দেখেছি। সেই আবার নিজের বোনের বিয়ের স্টেজ সাজানো,প্যান্ডেল সাজানো থেকে শুরু করে প্রোগ্রামের সব নিজের হাতে সামলেছে দেখেছি।
অথচ অনেক দেশের নেতা কিংবা উচ্চপদস্থরা এসবে কখনো হাত দেয় না।
এখানে একেকটা দ্বীপে মানুষ যেমন কম, আমি যে দ্বীপে আছি সেখানেও খুব কম মানুষ। খুব বেশি হলে দু তিন শ।
সবাই সবার কোনো না কোনোভাবে আত্মীয়, কারণ এদের নিজেদের দ্বীপে বা আশেপাশের দ্বীপে বিয়ে হয়। মূলত ৩/৪টা পরিবার শুরুতে এই দ্বীপে থাকতে শুরু করে,তারপর কালের পরিক্রমায় তাদের বংশধরেরা এখন অবধি বসবাস করছে।
আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, মালদ্বীপ কেমন লাগে?
আমি শুরুতেই বলতাম- একেবারে সেন্টমার্টিনের মতন।
পার্থক্য শুধু এই এখানে লোকজন কম।ভীড় কম।পরিচ্ছন্ন। আর সবকিছু ইম্পোর্টেট।
লবণ খাই থাইল্যান্ডের,নুডলস খাই মালয়েশিয়ার,দই খাই ফ্রান্সের, মাটন,চিকেন ইন্ডিয়া নয়তো চায়নার।আর পাচ্ছি প্রচুর সামুদ্রিক মাছ এবং টুনা।
টুনা মাছ ছাড়া আমাদের চলেই না।
অনেকের আসার আগে ভয় দেখিয়েছে সমুদ্র দেখে দেখে নাকি বোর হয়ে যাবো। আসলে না। সমুদ্রের পাড়ের এই শান্তির জীবনে এই কয়েক মাসে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন ভিড় , শোরগোল ভালো লাগে না।
রিজিকের টানে এখানে এসেছি, এসে জায়গাটা ভালো লেগে গেছে।যতদিন রিজিকে আছে উপভোগ করি। জীবন সুন্দর।
জান্নাতুন নাহার লিয়া
নৃ বাংলাদেশ
(মালদ্বীপ থেকে)