ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ, পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি ট্রাম্পের: কীসের ইঙ্গিত?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সহায়তা করার অর্থ—ভারতের প্রতি বার্তা, ‘আমাদের শর্ত মেনে চলুন, নয়তো শত্রুর শক্তিবৃদ্ধির ঝুঁকি নিন এবং আমাদের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনাকে বিপন্ন করুন।’ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও তেল কেনায় অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানান, আমেরিকা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার আওতায় দেশটির বিশাল তেল মজুতের পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সহায়তা করার অর্থ—ভারতের প্রতি বার্তা, ‘আমাদের শর্ত মেনে চলুন, নয়তো শত্রুর শক্তিবৃদ্ধির ঝুঁকি নিন এবং আমাদের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনাকে বিপন্ন করুন।’ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও তেল কেনায় অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার জানান, আমেরিকা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার আওতায় দেশটির বিশাল তেল মজুতের পরিকল্পনা রয়েছে।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত তেল কেনা বন্ধ না করায় একবার বিরক্ত ট্রাম্প ভারতকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘হয়তো ওরা (পাকিস্তান) ভারতের কাছেই তেল বিক্রি করবে।’
‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ভারতকে দোষারোপ করেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়নে সাহায্য করার জন্য। অথচ তিনি একসময় বলেছিলেন শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করতে পারবেন এই যুদ্ধ।
তিনি ভারতীয় অর্থনীতিকেও ‘মৃত” বলে কটাক্ষ করেছেন, কারণ দিল্লি তার দুগ্ধ ও কৃষি বাজার খুলতে রাজি হয়নি।
পাকিস্তান কী বলেছে?
পাকিস্তান আজ জানায়, এই চুক্তির ফলে ‘বিশেষ করে মার্কিন রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কমবে’, যদিও নির্দিষ্ট হারে কতটা কমবে তা স্পষ্ট করেনি। এপ্রিল মাসে ঘোষিত ২৯ শতাংশ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল চুক্তি আলোচনার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান তেল চুক্তি কী?
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ‘বিশাল’ তেল মজুত উন্নয়নে সাহায্য করবে। সম্ভবত এর অর্থ—একটি মার্কিন কোম্পানিকে খনন করার অধিকার দেওয়া হবে, যাতে তারা পাকিস্তানের অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করতে পারে।
ভারতের জন্য এর মানে কী?
ভারতের তেল মজুত অনেক বড়। ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী ৪.৮ বিলিয়ন ব্যারেল নিশ্চিত মজুত রয়েছে ভারতে। ভারত গভীর সমুদ্র থেকে তেল উত্তোলন ও শোধন করার ক্ষমতা রাখে, যা পাকিস্তানের নেই। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ভারত দৈনিক ৬ লক্ষ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করেছে, যেখানে পাকিস্তানের উৎপাদন মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল।
তবে উভয় দেশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল, ভারত বেশি; কারণ এর বাজার বড়।
১০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারত দৈনিক প্রায় ৫০ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। পাকিস্তানের সেই পরিমাণ ১.৪ লক্ষ ব্যারেল, যা তাদের গড় আমদানির চেয়ে কিছুটা কম।
তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চাপ দিচ্ছে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সাহায্য করছে, এতে পাকিস্তানের তেল সরবরাহ বাড়বে ও খরচ কমতে পারে। তবে আমেরিকার জন্য বিষয়টা অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত।
ওয়াশিংটনের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি আসলে ভারতকে চাপ দেওয়ার কৌশল:
১. রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করো।
২. আমেরিকার কাছ থেকে তেল কেন।
এই বছরের শুরুর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্পের বৈঠকে ভারত আমেরিকার কাছ থেকে আরও বেশি তেল ও গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়, সম্ভবত শুল্ক কমানোর আশায়।
তবুও ভারতের শীর্ষ তিন তেল সরবরাহকারীর একটি রয়ে গেছে রাশিয়া, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে।
ট্রাম্পের বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের কাছে তেল বিক্রি করবে’—এই মন্তব্য বাস্তবসম্মত নয়। কারণ:
১. পাকিস্তানের মজুত এত বড় নয় যে তা ভারতের আগ্রহের বিষয় হবে।
২. ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিবেচনায় এ ধরনের বাণিজ্য অসম্ভব।
তবে দীর্ঘমেয়াদে যদি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান জ্বালানি বাণিজ্য গতি পায়, তাহলে আমেরিকার কাছ থেকে তেল কেনায় ভারতের প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে, বিশেষ করে অনুকূল দামে।
পাকিস্তানের প্রকৃত তেল মজুত কত?
২০১৬ সালে পাকিস্তানের নিশ্চিত মজুত ছিল ৩৫৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেল, ভারতের তুলনায় ১০ শতাংশেরও কম। গত ১২ মাসে নতুন কিছু মজুত আবিষ্কারের কথা জানা গেছে।
২০২৪ সালের জুনে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি সিন্ধ প্রদেশে তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। সেপ্টেম্বরে আরও কিছু খনিজ অফশোর অঞ্চলে খোঁজার দাবি করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিটি ফিল্ড থেকে দৈনিক মাত্র ২০ থেকে ৭৪ ব্যারেল উৎপাদনের সম্ভাবনা পাওয়া গেছে, যা গভীর মজুতের ইঙ্গিত দেয় না। তবে এটা স্পষ্ট, পাকিস্তানে জলসীমায় এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন তেল মজুত রয়েছে।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তুরস্ক, যেটি এখন পাকিস্তান ও আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ৪০টি অফশোর ব্লকে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য চুক্তি করেছে, যেটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম তেল ও গ্যাস খনি।
তবে এখনো পর্যন্ত কোনো বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ বা কোম্পানি এগিয়ে না আসায় অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে “রেড ফ্ল্যাগ” হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে ২০২৪ সালের মার্চে বিদ্রোহীদের আত্মঘাতী হামলায় ৫ চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যুর পর বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে আমেরিকার এই উদ্যোগ পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির গভীর সমুদ্র খনন প্রযুক্তি নেই এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে এটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।