পঞ্চগড়ের শহীদুল ইসলাম, সাপের বাচ্চা ফুটিয়ে ছেড়ে দিলেন জঙ্গলে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি : || বিএমএফ টেলিভিশন
৩৬ বছর বয়সী শহীদুলের নেশা সাপ ধরা। এ নেশা ছয় বছর ধরে। আশপাশসহ কোথাও সাপ দেখা ও উদ্ধারের খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে। সেখান থেকে সাপ ধরে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তারপর নিরাপদ জঙ্গলে নিয়ে অবমুক্ত করে দেন তিনি। কয়েক মাস আগে তিনটি গোখরো সাপ উদ্ধার করে তার থেকে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছেন জঙ্গলে।
৩৬ বছর বয়সী শহীদুলের নেশা সাপ ধরা। এ নেশা ছয় বছর ধরে। আশপাশসহ কোথাও সাপ দেখা ও উদ্ধারের খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে। সেখান থেকে সাপ ধরে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তারপর নিরাপদ জঙ্গলে নিয়ে অবমুক্ত করে দেন তিনি। কয়েক মাস আগে তিনটি গোখরো সাপ উদ্ধার করে তার থেকে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছেন জঙ্গলে।
বলছিলাম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিড়ির নতুনহাট গ্রামের শহীদুল ইসলামের কথা। এ গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে তিনি। সাপসহ যেকোনো প্রাণীর প্রতি সংবেদশীল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যানম রিসার্চ সেন্টার থেকে সাপ ধরায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এলাকার মানুষদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হলেও সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন সাপ উদ্ধারকারী।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৬ বছরের বেশি সময় পথ প্রান্তরে ছুটছেন এ সর্পনেশাধর যুবক। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো বিরল প্রজাতির রেড কোরাল কুকরি নামে বিলুপ্ত প্রায় একটি প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। আহত অবস্থায় সেই সাপটি উদ্ধার করেছিলেন শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য বিষধর এবং নির্বিষ সাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন।
চলতি সালের এপ্রিলে জেলার বোদা থেকে তিনটি পূর্ণ বয়স্ক খৈয়া গোখরো সাপ উদ্ধার করেন শহীদুল। পরে সাপ ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এ সাপ তিনটির মধ্যে একটি মা সাপ ২৮টি ডিম দিলে সে ডিমগুলো নিজের কাছে রেখে দেন। পরে সে ডিমগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই নিজের তত্ত¡াবধানে রেখে পর্যবেক্ষণে রাখলে প্রায় ৭০ দিন পর তা থেকে ২০ টি বাচ্চা ফুটে বেড়িয়ে আসে। সাপগুলো খৈয়া গোখরো জাতের। বাচ্চাগুলো অবমুক্ত করে দিয়েছেন নিরাপদ জঙ্গলে।
সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতি সম্পর্কে শহীদুল ইসলাম বলেন, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সাধারণত ৭০ থেকে ৭৫ বাতাসের আদ্রতা প্রয়োজন। এছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে ডিম থেকে এমনিতেই বাচ্চা বের হয়। ২৮টি ডিমের মধ্যে তিনটি ডিম আগেই নষ্ট হয়েছিল। পরে ২৫টি ডিম নিবির পর্যবেক্ষনে রাখি। তা থেকে প্রায় ৭০ দিন পর ২০টি ডিম ফোটে সাপের বাচ্চা জন্মেছে। সাপের বাচ্চাগুলো স্থানীয় জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রত্যেক সৃষ্টির বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কাজেই আশপাশে এসব সাপ দেখলে কেউ যেন সেগুলো না মারে এবং ডিম পেলে সেগুলোও নষ্ট না করে। কোথাও সাপ দেখলে তাকে অথবা কোনো সাপ উদ্ধারকারীকে খবর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এখন দেশে সাপ দংশনের হার কমানোর পাশাপাশি এর সু-চিকিৎসার ব্যবস্থার স্বপ্ন আমার।
এর আগেও ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল উপজেলা সদরের লাঙ্গলগাঁও এলাকার দিনেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ির শোয়ার ঘরের মেঝের মাটি খনন করে ৭৫টি ডিম উদ্ধার করে তা নিজের তত্ত্বাবধানে বিশেষ তাপমাত্রায় পরিচর্যা করে ৭২টি বাচ্চা ফোটান। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ উদ্ধার করেন এবং ছোটখাট জঙ্গলে তা অবমুক্ত করেন।
২০২০ সাল থেকেই পেয়ে বসে সাপ উদ্ধারের নেশা। সে বছরেই ৬ মে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেস্কিউ টিম বাংলাদেশ নামে গড়েছেন একটি সংগঠন। সে সংগঠনের মাধ্যমে সারাদেশে তার পাঁচ শতাধিকের অধিক সদস্য যুক্ত রয়েছেন এ নেশায়। সাপের প্রতি ভালোবাসা ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণে পেয়েছেন জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড।