কেরানীগঞ্জে ভূমিদস্যুদের কবলে কৃষি জমি || ক্রাইম ওয়েব || Crime Wave

স্টাফ রিপোর্টার || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ রাত ১২:০০, বুধবার, ২১ মে, ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর, হাসনাবাদ, আইনথা, পানগাঁও, কাজীরগাঁও,  কাওটাইল, আরাকুল, বীরবাঘৈর, মঠবাড়ি ছিল এক সময় তিন ফসলি  চাষাবাদযোগ্য এলাকা। ঢাকার খাদ্য চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্য সরবরাহ করা হতো এই এলাকা থেকে। হাজার হাজার মানুষ শত শত বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে ফলাতো সোনালী ফসল। 
তখন কম দামি জায়গা ঢাকার আশেপাশে ছিল না বললেই চলে।  আর সে সুযোগে কেরানীগঞ্জের এসকল ফসলী জমির দিকে নজর পড়ে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা রিভারভিউ গ্রুপের।

তৎকালীন নাজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় জোরপূর্বক মাটি ভরাটের মাধ্যমে জমি দখল করে বসুন্ধরা রিভারভিউ। আর এর মাধ্যমেই চাষীর ৩ ফসলি আবাদি জমি বেদখল হয়ে যায় এবং আবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বালু দিয়ে স্থানীয় মানুষের জায়গা দখল করে বসুন্ধরার হাতে তুলে দেয়ার মূল কারিগর ছিল কেরানীগঞ্জ এর ত্রাস বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর অন্যতম সহযোগী শাহিন চেয়ারম্যান, রাসেল মেম্বার, দোলেশ্বরের মামুন মেম্বার সহ স্থানীয় নেতাকর্মী। 
তারা এতটায় দস্যু ছিল যে ভুয়া দলিল কিংবা খারা দলিল করেও জায়গা জমি দখল করেছে। শুধু জমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির এর জায়গা দখল করেও  বসুন্ধরাকে দিয়েছে। বিনিময়ে বসুন্ধরা রিভারভিউ গ্রুপের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। 

অনিয়ম, অপরাধ ও দূর্নীতির খোজে ক্রাইম ওয়েভের টিম এর যাত্রা এখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। আপস…
হাজী মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম! মীরেরবাগ মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি দখল করে ইসলাম এগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমনকি তারা বিএনপির প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর রায়ের জমি দখল করতেও বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতার ক্রাইম ওয়েভের টিম মুখোমুখি হলে তিনি কিভাবে জমি উদ্ধার করা যায় সেটা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান। 
জমি দখল হয়েছে কাদের তা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ক্রাইম ওয়েভের টিমকে বলেন, যে মাটি কাঁটা হয় তা সত্যি, তবে এগুলো বসুন্ধরার মাটি নয়, ব্যক্তি মালিকানার মাটি যা বসুন্ধরা দখল করে রেখেছে। 
18 মার্চ 2025 
এইসব তথ্য সত্যতা যাচায়ের জন্য গভীর রাতে বের হলেন ক্রাইম ওয়েভের টিম। কিছুক্ষণ সামনে গেলেই চোখে পড়ে একদল লোক রাতে অন্ধকারে ভেকো লাগিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কারা এই গভীর রাতে মাটি কেটে নিয়ে যায়। আমাদের দেখে কেনই বা পালিয়ে গেলো ? প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়?
তাদের সাথে কথা বলার জন্য গেলে ক্যামেরার সামনে কথা বলার অপরাগতা দেখিয়ে ভেকু ও গাড়ি রেখে পালিয়ে যায় অপরাধিরা। 
পরের দিন সকালে বসুন্ধরা রিভারভিউ এর সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম ক্যাপ্টেন রিফাতকে রাতের বিষয়ে অবগত করলে তিনি মাটি কাটার বিষয়ে বিএনপি নেত্রী নিপুন রায় জড়িত বলে মন্তব্য করেন। আমাদের টিম বুঝতে পারে যে বিএনপি'র ভাবমূর্তি নস্ট করার জন্য বসুন্ধরা রিভারভিউ এর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এদিকে  এ ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য কোন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি  নুর হোসেন নূরের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন।
এরপর বসুন্ধরা রিভারভিউয়ের পক্ষ থেকে নিপুন রায়ের বিপক্ষে আগত বক্তব্যকে পরিষ্কার করতে আমরা নেতাকর্মীদের প্রশ্নকরি।
আমাদের প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় বিএনপি নেতা আফজাল শিকদার ও অন্য নেতাকর্মীদের বিষয়টি জিজ্ঞ্যাস করলে জানান আমরা নিজের জমি থেকে মাটি কাটি। 
তবে কেচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপ। শ্রমিক দলের ৮ নং ওয়াড এর সাধারণ সম্পাদক। নাম জহিরুল ইসলাম জনি। ৫ আগস্টের আগে ছিলেন অভাবগ্রস্থ মানুষ। নুন আনতে পান্তা ফুরাত। অথচ ৫ আগস্টের পর আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন জহিরুল ইসলাম জনি। ভাগ্যের চাকা এতটাই বদলেছে যে এখন চড়েন দামী গাড়িতে। এত দ্রুত কিভাবে ভাগ্যের চাকা ঘুরালো জনি সেজন্য শুরু হয় অনুসন্ধান। সেই অনুযায়ী বিএমএফ ক্রাইম ওয়েভের চোখে উঠে আসে তার টাকা কামানের মেশিনের গল্প কাহিনী। 
ভেকু দিয়ে পদ্মা সেতুর রেল লাইনের নিচ থেকে সরকারি মাটি কেটে মাহিন্দ্র ট্রাকের মাধ্যমে ইট ভাটায় বিক্রি করছে। 
এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে মাটি ফেলে জায়গা ভরাট করছে। এছাড়াও সরকারি খালের পাশে মাটি ভরাট করে সরকারি জায়গাও দখলের পায়তারা করে যাচ্ছেন জহিরুল ইসলাম জনি। আর এভাবেই গত কয়েক মাসে নামে বেনামে গড়েছে টাকার পাহাড়। 
এসকল ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয়দের ফসলাদি জমি ফেরত দেয়ার বন্দোবস্ত করে দেয়ার জন্য সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়