নারীর শক্তি: নরম হাতে সমাজের পুনর্জাগরণ
শিরিন আকতার || বিএমএফ টেলিভিশন
নারীর শক্তি কখনও শব্দে প্রকাশ পায় না—
তা প্রকাশ পায় নীরবতায়, চোখের দৃঢ়তায়, কিংবা অন্যের সুখে নিজেকে গলিয়ে দেওয়ার সহজ ক্ষমতায়।
তবুও সমাজ তাকে এখনও বোঝার চেষ্টা করছে,
যেন সে কোনো রহস্য, অথচ সে-ই সমাজের অজানা ভিত্তি।
প্রত্যেক ঘরের ভেতরে একেকজন নারী রয়েছেন,
যিনি এক হাতে সংসার, আর অন্য হাতে নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন।
ভোরে চুল বাঁধার ফাঁকে তিনি হয়তো হিসেব করেন সংসারের খরচ,
আবার সেই হাতেই লিখে রাখেন সন্তানের ভবিষ্যৎ।
এই নীরব কর্মযজ্ঞই আসলে এক অদৃশ্য বিপ্লব —
যার মূল্য সমাজ এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।
নারী শুধু জন্মদাত্রী নয়,
তিনি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেন —
কীভাবে একজন মানুষ হবে, কীভাবে মানবিকতা বেঁচে থাকবে।
তার ভেতরের শক্তি মাপা যায় না পেশীতে,
তা মাপা যায় দায়িত্বে, সহনশীলতায় আর পুনর্গঠনের ক্ষমতায়।
যখন সমাজ ভেঙে পড়ে অন্যায়ের ভারে,
নারীরাই প্রথম হাতে তুলে নেয় আলো।
কখনও মায়ের মমতা হয়ে, কখনও শিক্ষিকার দিকনির্দেশনা হয়ে,
আবার কখনও একক উদ্যোক্তা হয়ে —
যিনি বলেন, “আমি পারব।”
আজকের নারী আর নীরব দর্শক নয়।
সে লেখে, নেতৃত্ব দেয়, ব্যবসা গড়ে, পরিবর্তন ঘটায়।
কিন্তু এই যাত্রা এখনো সহজ নয়।
সমাজ তার শক্তিকে প্রশংসা করে, আবার ভয়ও পায়।
কারণ, নারী জেগে উঠলে সে কেবল নিজের নয়— পুরো সমাজের মানচিত্র বদলে দেয়।
তাই প্রয়োজন স্বীকৃতি নয়, সহযাত্রা।
নারীকে বোঝার, নয়— পাশে দাঁড়ানোর।
কারণ, তার শক্তি কোনো পুরুষের বিপরীতে নয়,
তার শক্তি এই সমাজের পক্ষে — মানবতার পক্ষে।
নারীর এই অব্যক্ত শক্তিই একদিন সমাজকে বদলে দেবে।
নরম হাতের মমতায়, কঠিন সময়ের সাহসে,
আর ভেতরের নীরব আগুনে—
যা কোনো শব্দে নয়, কিন্তু ইতিহাসে চিরকাল থেকে যাবে।
লেখক পরিচিতি:
শিরিন আখতার — সমাজভাবনা ও আত্মবোধের লেখক, যিনি নারীর শক্তি, মানবিকতা ও জীবনের গভীরতা নিয়ে নিয়মিত লেখেন।