আগামী নির্বাচনে যেভাবে বিরোধী শিবিরে বসতে পারে আ.লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৯, রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে বসবে না জামায়াতে ইসলামী—এমনটি প্রায় নিশ্চিত। দলটির নেতারা সরকার গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, এককভাবে বিএনপির পাল্লাই এবার ভারি হবে। এ কারণে ক্ষমতার অংশীদার হতে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় বেশি আগ্রহী জামায়াত। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে বিরোধী শিবিরে বাসার সুযোগ তৈরি হয়েছে গণঅভভ্যুত্থানে পতিত দলটির।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে বসবে না জামায়াতে ইসলামী—এমনটি প্রায় নিশ্চিত। দলটির নেতারা সরকার গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, এককভাবে বিএনপির পাল্লাই এবার ভারি হবে। এ কারণে ক্ষমতার অংশীদার হতে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় বেশি আগ্রহী জামায়াত। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে বিরোধী শিবিরে বাসার সুযোগ তৈরি হয়েছে গণঅভভ্যুত্থানে পতিত দলটির।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শুধু আসন নয়, বিএনপি ঘোষিত জাতীয় সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভাতেও অংশ নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী। সাংগঠনিক স্বার্থসহ নানা কারণে জামায়াত কোনোভাবেই আগামী সংসদে বিরোধী দলে বসতে চায় না। টানা পনেরো বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সময়ে মামলা-হামলা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অন্তত ৬০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব আসনের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগের ‘রিজার্ভ ভোট’ তুলনামূলক বেশি। বিশেষত যেসব আসনে সংখ্যালঘু ভোট ১৮ থেকে ২২ শতাংশ—সেগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দেশ ও ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিম এ নিয়ে কাজ করছে।

ওই টিমের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ১০ থেকে ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবে জয়ী হতে পারে। পাশাপাশি আরও অন্তত ৪০টি আসনে তারা অল্প ব্যবধানে বিজয় আশা করছে। তাদের ধারণা, সর্বনিম্ন ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে। ফলে নির্বাচনের ফলাফলে দলটি বিরোধী শিবিরে বসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, জামায়াত মনে করছে, কম আসন নিয়ে বিরোধী দলে গেলে দলীয় অবস্থান দুর্বল হবে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করলে সংসদে তাদের আসন বাড়বে এবং সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া যাবে। তাছাড়া মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে পারলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রভাবও বাড়বে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিরোধী দলে থাকলে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জনস্বার্থে কথা বলতেই হবে। ফলে জামায়াত যদি পৃথকভাবে নির্বাচন করে সংসদে সরকারি দলের বাইরে অবস্থান নেয়, সেক্ষেত্রে জটিল এক সমীকরণ তৈরি হবে। কারণ সংসদে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপিরাও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। তখন দৃশ্যত জামায়াত ও আওয়ামী লীগকে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। বাস্তবে সেটি হলে তা হবে এক আত্মঘাতী ‘ট্র্যাজিক পলিটিক্স’। ওই রকম পরিস্থিতির জন্য জামায়াত কোনোভাবে প্রস্তুত নয়। যদিও ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে রাজপথে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত আন্দোলন করেছিল। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট বা ধারণা জামায়াতই প্রথম সামনে নিয়ে আসে। আবার সেই জামায়াতকে যদি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয় তাহলে দলটির রাজনীতির ফলাফল কি দাঁড়াবে। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এখানে স্বার্থের জন্য পিতা পুত্রকেও ছাড় দেয় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা অনেকটা কৌশলী উত্তর দেন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সমান অংশীদার তারা। এদেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আর নির্বাচনে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগ ৪০-৫০টি আসনে বিজয়ী হবে বলে যারা মনে করছে-তাদের সে আশা পূর্ণ হবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন। যতই অপরিচিত হোক-ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের চিনতে তারা ভুল করবে না। জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ যুগান্তরকে বলেন, এসব কথা কিছু লোকের শুনতে ভালো লাগে। যারা ক্ষমতা কনফার্ম করে রাখছে তাদেরকে শোনালেই ভালো হয়। জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বর্ণচোরা আওয়ামী লীগারদের চিনতে মানুষ ভুল করবে না। তারা জনসমক্ষেই আসতে পারবে না।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়