ভালো থাকার কোনো বিলাসিতা নেই, এটা দায়িত্ব
শিরিন আকতার || বিএমএফ টেলিভিশন
আমরা অনেকেই মনে করি — “ভালো থাকা” মানে যেন একরকম বিলাসিতা, সময় থাকলে করা যায়; না পারলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু বাস্তবতা একদম উল্টো। ভালো থাকা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের দায়িত্ব — নিজের প্রতি, নিজের প্রিয়জনদের প্রতি, এমনকি সমাজের প্রতিও।
আমরা অনেকেই মনে করি — “ভালো থাকা” মানে যেন একরকম বিলাসিতা, সময় থাকলে করা যায়; না পারলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু বাস্তবতা একদম উল্টো। ভালো থাকা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের দায়িত্ব — নিজের প্রতি, নিজের প্রিয়জনদের প্রতি, এমনকি সমাজের প্রতিও।
একজন অশান্ত মানুষ যতই সফল হোক, তার ভেতরের অস্থিরতা ধীরে ধীরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আবার যে মানুষ নিজের ভেতর শান্তি ধরে রাখে, সে অন্ধকার সময়েও আশার আলো হয়ে জ্বলে। তাই ভালো থাকা শুধু নিজের সুখের প্রশ্ন নয়, এটি এক নীরব দায়িত্ব — যাতে আমরা অন্ধকার না ছড়াই, বরং আলোটা ধরে রাখি।
জীবনের প্রতিদিনই নানা চাপ, হতাশা, প্রতিযোগিতা আর অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় যে মানুষ নিজেকে সামলে রাখে, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে — সে কেবল নিজের জন্য নয়, চারপাশের মানুষের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। কারণ এক অসুখী মন কখনোই সুস্থ সম্পর্ক গড়তে পারে না, এক অস্থির আত্মা কারো প্রশান্তির কারণ হতে পারে না।
ভালো থাকা মানে নিজেকে যত্ন নেওয়া — সময়মতো ঘুমানো, সঠিকভাবে খাওয়া, কিছু সময় নিজের পছন্দের কাজে ব্যয় করা, এবং নিজের মানসিক ক্লান্তিকে স্বীকার করা। এই যত্নের ভেতরেই থাকে আত্মসম্মান, আত্মপ্রেম এবং আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আমরা যখন নিজেকে ভালো রাখি, তখন পরিবার, সমাজ, এমনকি কর্মক্ষেত্রও আমাদের মাধ্যমে ভালো প্রভাব পায়। তাই নিজের শান্তিকে অবহেলা করা মানে শুধু নিজেকে নয়, অন্যদেরও কষ্ট দেওয়া।
ভালো থাকা মানে নিজেকে যত্ন নেওয়া, নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেওয়া, আর নিজের প্রতি দয়া করা। আজ আমরা অন্যদের প্রতি দয়ালু হতে শিখেছি, কিন্তু নিজের প্রতি দয়া করতে ভুলে গেছি। অথচ ক্লান্ত মানুষ যখন নিজের ভেতরে একটু করুণা রাখে, তখনই সে নতুন করে বাঁচার শক্তি খুঁজে পায়।
ভালো থাকা মানে সবকিছু ঠিকঠাক থাকা নয়, বরং বিশৃঙ্খলার মাঝেও নিজেকে ধরে রাখার শিল্প। মাঝে মাঝে নিরব হয়ে বসা, নিজের মনকে শোনা, আর স্বীকার করা — “আমি মানুষ, আমারও বিশ্রাম দরকার।” এই স্বীকারোক্তিই আমাদের মানবিক রাখে।
আমরা ভুলে যাই — নিজের মানসিক শান্তি কোনো ব্যক্তিগত বিলাসিতা নয়, এটি একটি সামাজিক প্রয়োজন। এক শান্ত মনের মানুষ যেমন পরিবারে স্থিতি আনে, তেমনি সমাজেও ছড়িয়ে দেয় ইতিবাচকতা।
ভালো থাকা মানে পৃথিবী থেকে পালানো নয়, বরং তার ভেতর থেকেই আলো খোঁজা।
কারণ ভালো থাকা মানে কেবল বেঁচে থাকা নয় — ভেতর থেকে জীবন্ত থাকা।