গেমের মাধ্যমে নয় দক্ষতা অর্জন করে বৈধ পথে বিদেশ যেতে হবে: ইউএনও
বিপুল কুমার দাস, রাজৈর উপজেলা প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন
গেমের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়ার পথে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমাদের সকলকে দায়িত্ব নিয়ে প্রচার করতে হবে। বিদেশ যাওয়ার সময় নিয়ম মেনে বৈধ পথে যেতে হবে। দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে ক্ষতির শিকার হবেন না -বলে মন্তব্য করেছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল হক। বুধবার (২১ মে) ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে রাজৈর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাদারীপুরের ব্র্যাক জেলা সমন্বয়কারী মিতু রানী দেবনাথ-এর সভাপতিত্বে ‘নিরাপদ অভিবাসন ও টেকসই পুনরেকত্রীকরণ’ বিষয়ক এ উপজেলা কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো মাহফুজুল হক আরও বলেন, ‘যারা গেমে অংশ নিয়ে জীবন দিচ্ছেন তাদের পরিবার অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই আমাদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জেনে-বুঝে তারপরে কাজের খোঁজে বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন। সচেতন না হলে প্রতারণার শিকার হতে হবে, এমন কি জীবনও দিতে হতে পারে।”
কর্মশালার বিশেষ অতিথি রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্বাশতী ছন্দা দেবনাথ বলেন, “ প্রান্তিক পর্যায়ে প্রচার করার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে নিরাপদ অভিবাসন সম্ভব হবে না। আমাদের যার যার জায়গা থেকে এ বিষয়ে প্রচার করতে হবে।”
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আরা বলেন, “শিশু থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় অভিবাসন বিষয়ে আলোচনা শেখানো যেতে পারে।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন আফরোজ বলেন, “নারীদের জন্য বিদেশ যাওয়া যেমন সহজ তেমন তাদের সাথে ঘটছে নির্যাতনের ঘটনা। আমাদের এ বিষয়ে আরো প্রচার করতে হবে। যেনে শুনে কাজ শিখে বিদেশ গেলে নারীরাও আমাদের অর্থনীতিতে অনেক অবদান
রাখতে পারবে। এ জন্য সরকার এ ধরণের জীবন যুদ্ধে জয়ী নারীদের অদম্য নারীর পুরস্কার দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।”
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাদশা ফয়সাল বলেন, “আমরা বিদেশ যাব কাজের জন্য আয়ের জন্য তাই নিরাপদ পথ বেছে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে ক্ষতিগ্রস্তবিদেশ-ফেরত অভিবাসী দেলোয়ার হোসেন ও নাঈম মোল্লার হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মাহফুজুল হক।
এছাড়া বিদেশে থাকার সময়ে নিজের অভিজ্ঞতা সবাইকে জানান ইতালি ফেরত অভিবাসী লুৎফর রহমান এবং বিদেশ-
ফেরত দেলোয়ার হোসেন ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রাজৈর উপজেলার কর্মশালাটি পরিচালনা করেন মাদারীপুর এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর জয় বনিক। মূল
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের রিজওনাল এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর দেবানন্দ মন্ডল। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অভিবাসন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিদেশ-ফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যগণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও- ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানা সহযোগিতামুলক কার্যক্রম ব্যাস্তবায়ন করে আসছে।