নাগরপুরে আ'লীগ নেতার বিরুদ্ধে লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের কলমাইদ গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ খলিলুর রহমান (খলিল)-এর বিরুদ্ধে সরকারি ভাতা ও ঘর দেওয়ার নাম করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে গরিব ও অসহায় মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোঃ খলিলুর রহমান বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছেন। এরপর তিনি সরকারি বিভিন্ন সুবিধা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী কার্ড, ভূমি খারিজ ও রেকর্ড, এমনকি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, খলিল এসব সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রথমে টাকা নেন, তারপর কাজ না করে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর তালবাহানা করেন। কেউ টাকা ফেরত চাইলে তিনি বলেন তোমরা পাবে, কাজ চলমান।
এই প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা অবশেষে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি নাগরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনজন ভুক্তভোগী: মোঃ আফাজ উদ্দিন (৭২), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৭), এবং মোঃ জুড়ান আলী (৭৫)।
ভুক্তভোগী মোঃ আফাজ উদ্দিন এর কাছ থেকে জমির খাজনা খারিজ ও রেকর্ড করে দেওয়ার কথা বলে প্রতারক খলিল ১,৪৯,৩০০ টাকা নিয়ে নেন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ হয়নি। উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকারি ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ১৫,০০০ টাকা দিয়েছেন ছয় বছর আগে, কিন্তু ঘর তো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
মোঃ জুড়ান আলী প্রতিবন্ধী কার্ড করার জন্য ৫,০০০ টাকা দিয়েছেন। খলিল কার্ডটি করিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা প্রতি মাসে নিজেই তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, তারা যখন বারবার টাকা ফেরতের জন্য খলিলের কাছে যান, তিনি তাদের গালিগালাজ করেন, ভয়ভীতি দেখান এবং সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দেন।
এলাকাবাসীরা বলেন, শুধু তিনজন না এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন গ্রামের আরও অনেকে, ভয়ে বলতে পারছেন না। বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, যারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে মরিয়া।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, খলিল নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে মানুষকে ঠকিয়ে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে বলে, 'আমার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবি না, আমি উপরে খবর রাখি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ধরনের প্রতারকদের কারণে প্রকৃত অসহায় মানুষ সরকারি সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, বিষয়টি যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নাগরপুর থানার এ এস আই বদিউল আলম বিএমএফ টেলিভিশনকে জানান, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।