বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বো ?

মিনহাজুর রহমান মাহিম ইবি প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ রাত ০৯:১২, মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রকৌশলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং—শুধু একটি বিষয় নয়, বরং একটি সম্ভাবনার দিগন্ত। চিকিৎসা যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন থেকে শুরু করে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি কিংবা রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতি—সব কিছুতেই বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান অনস্বীকার্য। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে—কেন পড়বো বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই আমরা কথা বলেছি একজন শিক্ষক ও পাঁচজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে—যারা এই বিভাগকে বেছে নিয়েছেন নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য। সকলের বক্তব্য তুলে ধরছেন মো. মিনহাজুর রহমান মাহিম-

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, "মেডিকেল, সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সংমিশ্রণই হলো বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটি। এই বিষয়ের ফিল্ড অত্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমানে গবেষণার ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) এবং কমিউনিকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেও অনেকেই বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দিকে ঝুঁকছে। ফলে গবেষণার দিক বিবেচনায় এটি একটি শীর্ষস্থানীয় সাবজেক্ট।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও হসপিটাল থেকে শুরু করে প্রতিটি মেডিকেল সেক্টরে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। যখন এই জায়গাগুলো ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হবে, তখন দেশে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি বিশাল কর্মসংস্থান ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই দিক থেকে দেখলে এই বিষয়ে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য চাকরির সাধারণ সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি মেডিকেল, হসপিটাল এবং ক্লিনিক্যাল সেক্টরের বিশেষ সুযোগগুলোও পাবে।
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভিন্ন ফিল্ড যেমন—ক্লিনিক্যাল, রিজেনারেটিভ বা রিপেয়ার মেডিসিন, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, বায়োমেটেরিয়ালস, প্রোস্থেটিক ইত্যাদিতে যারা গ্র্যাজুয়েশন করবে, তারা চাকরিক্ষেত্রে ভালো সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। তাই এসব দিক বিবেচনায় একজন শিক্ষার্থীর জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা যথেষ্ট যৌক্তিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”

ইবির বিএমই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তহমিনা ইয়াসমিন তন্বী বলেন, "বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিজ্ঞানের এমন এক শাখা, যেখানে প্রযুক্তি ও চিকিৎসা একসঙ্গে কথা বলে। যারা বিজ্ঞানকে ভালোবেসে প্রযুক্তি দিয়ে চিকিৎসা ও মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চায়—তাদের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া উচিত। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া মানে শুধু ডিগ্রি নেওয়া নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনার শক্তি অর্জন। এর মাধ্যমে উন্নত ক্যারিয়ার গড়া তো সম্ভবই, পাশাপাশি একে মানবসেবার ব্রত হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশে সুযোগ এখনও সীমিত হলেও হাসপাতাল ও হেলথটেক সেক্টরে চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির বিশাল সুযোগও রয়েছে। তাই বিদেশের পাশাপাশি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশে নিজেকে ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে এক দারুণ সম্ভাবনার সিঁড়ি।"

ইবির বিএমই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহ মুহাম্মদ নাঈম বলেন, "প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার সমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করা হয় যা বাৎসরিক খরচের প্রায় ৬-১০ শতাংশ এবং একটি পদ্মা সেতুর মূল্যের সমান। এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কিন্তু চাইলে অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। কিভাবে? 
দেশে স্বাস্থ্যসেবা গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং পর্যায়ে গেলে এসব ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব যেটা আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হরহামেশাই দেখি। এছাড়াও গবেষণা ও উন্নয়ন খাত উন্নত হলে দেশেই প্রয়োজনীয় রিয়েজেন্ট ও মেডিসিন তৈরি সম্ভব যেমনটা আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে দেখছি। এতে করে খুব সহজেই আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে ৩০-৫০% বৈদেশিক মুদ্রা খরচ কমানো সম্ভব যা দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য একপ্রকার আশীর্বাদ। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও ব্যাপক অবদান রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। সরকার এবং দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অবশ্যই এদিকে সুনজর দেওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্বের সাথে এবং কম্পিটিটিভ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিতে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে স্বাস্থ্য খাতে নিজেদের স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প নেই। 
এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে আমাদের বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটরা, যারা একটি বহুমুখী সাবজেক্ট নিয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করছেন। এখানে ডিসিপ্লিন নিয়ে পড়াশোনা করে একইসাথে আমাদের দেশের মেধাবী, অভিজ্ঞ ডাক্তারদের স্কিলড সাপোর্টিং প্রফেশনালস হওয়া সম্ভব। এছাড়াও ইকুইপমেন্ট ডিজাইনিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, প্রোডাকশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ রেগুলার মেইনটেনেন্স ও অপারেশনাল অথরিটি হওয়া সম্ভব। আবার একইসাথে এই প্রকৌশলী ও জীববিদ্যা বিষয়ে পারদর্শী গ্রাজুয়েট চাইলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে পলিসিমেকিং থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনিক কাজেও দক্ষতার সঙ্গে জনসেবা দিতে পারবে। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করার সুযোগ তো আছেই। সর্বোপরি, পুরো হেলথকেয়ার সেক্টরকে আপগ্রেড করার সুফল হচ্ছে যে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, টেকসই উন্নয়ন, রপ্তানির নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি, আত্মনির্ভরশীলতা এবং বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু ভালো একটা পেশা গড়ার সুযোগ নয়—এটা দেশের জরুরি চাহিদার অংশ। বাংলাদেশে এখন নিজস্ব স্বাস্থ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা দক্ষ মানুষ দরকার। সেই দায়িত্ব নিতে পারে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়াররা। এখনই সময়, দেশের ভেতরেই আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার।"

ইবির বিএমই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এসএম মাহিম বলেন, "বাংলাদেশে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, দেশের স্বাস্থ্যসেবা সেবা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি, ডায়াগনস্টিক টুলস এবং মেডিকেল ডিভাইসগুলোর উন্নয়নে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন, যারা মেডিকেল যন্ত্রপাতি ডিজাইন, ডেভেলপ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে।
বাংলাদেশের উন্নত হাসপাতাল এবং মেডিকেল সেন্টারগুলোতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব বাজারে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশাল চাহিদা রয়েছে, যা বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাজীবীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে উদ্যোগতা হওয়ার সুযোগও রয়েছে, কারণ নতুন নতুন স্টার্টআপ বা ইনোভেটিভ প্রকল্প শুরু করার সম্ভাবণা প্রচুর। এছাড়াও, গবেষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেখানে আপনি নতুন প্রযুক্তি বা চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারেন। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটি শক্তিশালী ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব, যেখানে মানুষের জীবনমান উন্নত করা যায়।"

কুয়েটের বিএমই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজমাঈন ফায়িক বলেন, "অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টের সাথে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই)-এর পার্থক্য হলো, সব ইঞ্জিনিয়াররা যেখানে শুধুমাত্র কোনো একটা মেশিন, বা ডিভাইসের মেশিনারি স্ট্রাকচার, সার্কিট, অপারেশন সিস্টেমের বিষয়ে কনসার্নড থাকে সেখানে একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার এসবই দেখেন মেডিকেল সায়েন্সের অ্যাসপেক্ট থেকে। একারণে বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বের সাথে পাল্লা দিয়ে বিএমই-র প্রয়োজনীতা ও চাহিদা উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এই সেক্টরের ডেভেলপমেন্ট আর রিসার্চে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। অবশ্য আমাদের দেশ এখনো বায়োমেডিকেল সেক্টরে কিছুটা পিছিয়ে আছে, তাই দেশে বিএমই-র জব সেক্টরে কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে আশা রাখা যায় আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশও এই ঘাটতি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে ফেলবে। বাংলাদেশের বেশ কিছু পাবলিক ভার্সিটিতে বিএমই-তে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত করার সুযোগ আছে। দেশে গ্র্যাজুয়েশনের পর অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান, তবে এজন্য অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট আর রিসার্চ পেপার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, আর ডিমান্ডিং জব সেক্টর থাকার কারণে তাদের অনেকে উচ্চশিক্ষার পর সেদেশেই স্যাটেল হয়ে যান। যারা একই সাথে প্রকৌশল এবং লাইফ সায়েন্সে আগ্রহী তাদেরই বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া উচিত। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মনোবল। গ্র্যাজুয়েশনের সময় দেশে জব সেক্টরের কিছুটা ঘাটতি দেখে হতাশা আসতে পারে, কিন্তু যারা ভার্সিটি লাইফে মনোবল ধরে রেখে অ্যাকডেমিক রেজাল্ট ভালো রাখার পাশাপাশি নিজেকে স্কিলফুল ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করতে পারে তাদেরকে কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না।"

ইবির বিএমই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সায়েম হোসেন বলেন, "ছোটবেলায় বাবা চাইতেন ছেলে আমার ইঞ্জিনিয়ার হবে, মা বলতেন না, আমার খোকা ডাক্তারই হবে। এমন মিষ্টি দ্বন্দের মাঝে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেও বড় কোথাও চান্স না পাওয়ায় হতাশায় ভোগে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তবে যদি বলি এই দুটো সেক্টরের স্বাদই একটি ডিপার্টমেন্ট থেকে পাওয়া সম্ভব তবে কি অবাক হবে? হ্যাঁ, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এমনই এক বিষয়। এটি প্রকৌশল বিদ্যা এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের এক সেতুবন্ধন যেখানে মূলত প্রকৌশল শাস্ত্রের জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে মানবদেহের নানান সমস্যার সমাধান করা হয়। 
মূলত অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলোর জ্ঞানকে এক্সটেন্ড আর মডিফাই করে এখানে পড়ানো হয়। যেমন ধরো, সিভিল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ যেমন বলবিদ্যা পড়ানো হয়, এখানে বেসিক মেকানিক্স পড়ানোর পাশাপাশি সেই জ্ঞানকে হিউম্যান বডিতে অ্যাপ্লাই করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য পড়ানো হয় বায়োমেকানিক্স। 
বায়োমেকানিক্স এর মত ঠিক একইভাবে বিভিন্ন সাব্জেক্ট যেমন-বায়োসিগন্যাল প্রসেসিং, বায়োইলেকট্রিসিটি, বায়োমেটেরিয়ালস, বায়োফ্লুইড মেকানিক্স, বায়োমেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টেশন, মেডিকেল ইমেজিং, বায়োসেন্সর, টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রি-জেনারেটিভ মেডিসিন, ব্রেইন এন্ড কগনিটিভ সিস্টেম, রিহ্যাবিলিটেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, হেলথকেয়ার ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং কোর্স পড়ানো হয়ে থাকে।
তবে অনেকেই মনে করে এটা মেডিকেলের মত মুখস্থনির্ভর বিষয় যেটা পুরোপুরি সত্য নয়,  এনাটমি-ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি কয়েকটি কোর্স অল্প কিছু ক্রেডিটে পড়ানো হয়। আছে প্রোগ্রামিংও যা কিনা বায়োইনফরমেটিকস এ বেশ কাজে লাগে। আর নরমাল ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ তো আছেই। সুতরাং, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রচলিত অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ড এর মতো বিষয়গুলোই পড়ানো হয়। 
এ প্রসঙ্গে আমাদের দেশের অনেক মানুষের এক ভুল ধারণা আছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে থাকেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ইকুয়েপমেন্টের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেটিং। সত্যি কথা বলতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের খুব সামান্য একটি অংশ মাত্র। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়াররা মূলত রোগ নিয়ে গবেষণা, মেডিকেল ইকুয়েপমেন্টের উন্নয়ন, রোগ নির্ণয়ের নতুন ও কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার, আর্টিফিশিয়াল প্রসথেটিক্স ডিজাইনিং, উন্নত ড্রাগ ডেলিভারি, ন্যানোবায়োটেকনোলজি, বায়োমেট্রিক্স, বায়োইনফরমেটিক্স, বায়োরোবোটিক্স তৈরি ও পরিচালনা এবং চিকিৎসাক্ষেত্রের সামগ্রিক মানোন্নয়নে কাজ করেন। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি কাজ কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।  
এটি শুধুমাত্র বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, জাস্ট, ইবি, এমআইএসটি এর মতো সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু আছে তাই চাকুরির বাজারে প্রতিযোগিতা কম।"

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়নে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি নিরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এই শাখার চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তরুণদের কাঁধে ভর করেই তৈরি হবে ভবিষ্যতের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিমতই প্রমাণ করে, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং শুধুমাত্র একটি সাবজেক্ট নয়—এটি ভবিষ্যতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার এক স্বপ্নযাত্রা।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়