শিক্ষার একাল-সেকাল, প্রাণ ছিলো পুরনো বইয়ে।
বিএমএফ টেলিভিশন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
বুলবুল হাসান, পাবনা জেলা প্রতিনিধি : "শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড" এই বাক্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি যা শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানো হয়। যেমন একটি মেরুদণ্ড শারীরিক কাঠামো কে সোজা রাখতে সহায়তা করে, তেমনই শিক্ষা একটি জাতির অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। সুপ্রাচীন কাল থেকে শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। শিক্ষাই পারে একটি মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেক, নৈতিক গুনাবলির বিকাশ সাধন, সৃজনশীল চিন্তাকে বিকশিত করতে। শিক্ষা আমাদের মূল্যবোধ কে জাগ্রত করে, সমাজের কুসংস্কার, অনৈতিক কার্যকলাপ, অপসংস্কৃতি ও বিকৃতি চিন্তা থেকে দূরে রাখে। মুল কথা শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি আলোর মুখ দেখতে পারে না।তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার গুনগত মান ধরে রাখা উচিত। বর্তমানে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বুলবুল হাসান, পাবনা জেলা প্রতিনিধি : "শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড" এই বাক্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি যা শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানো হয়। যেমন একটি মেরুদণ্ড শারীরিক কাঠামো কে সোজা রাখতে সহায়তা করে, তেমনই শিক্ষা একটি জাতির অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। সুপ্রাচীন কাল থেকে শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। শিক্ষাই পারে একটি মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেক, নৈতিক গুনাবলির বিকাশ সাধন, সৃজনশীল চিন্তাকে বিকশিত করতে। শিক্ষা আমাদের মূল্যবোধ কে জাগ্রত করে, সমাজের কুসংস্কার, অনৈতিক কার্যকলাপ, অপসংস্কৃতি ও বিকৃতি চিন্তা থেকে দূরে রাখে। মুল কথা শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি আলোর মুখ দেখতে পারে না।তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার গুনগত মান ধরে রাখা উচিত। বর্তমানে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এই আধুনিক যুগে শিক্ষা ব্যবস্থায় যতটা না উন্নতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে। এমন টাই দাবি অভিভাবক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ গনের। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে । আগের দিনে শিশুদের বাবা-মা, শিক্ষক শেখাতেন এমন জীবন তুমি করিবে গঠন মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন। কালের বিবর্তনে সকল কিছু আজ পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের, নীতি নৈতিকতা আদর্শের, সততার, শিক্ষা ব্যবস্থার, সেই সাথে সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনার। সকল কিছুর মূলে অর্থ আজ মানুষের ধ্যান জ্ঞান। অর্থ মোহ আজ সমাজের মানুষ কে পশু বানিয়েছে। এই জগৎ যে চিরস্থায়ী নয় সেটা ভুলতে বসেছে সকলে । অনিয়ম গুলো সমাজের মানুষের রক্তে মিশে একাকার। মানুষ অনিয়ম করার প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে'
পরিতাপের বিষয় পাঠ্যবই,পরিবার সমাজে এ কথা আজ মূল্যহীন । শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আজ সার্টিফিকেটের মহা দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। দেশে জিপিএ ৫ বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষার মান। এগুলো দেখলেই আমাদের মনে চেতনার উদ্বেগ হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা কোন পথে হটছে? শিক্ষা ব্যবস্থায় আদৌ স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকছে কি? শিক্ষার্থীর উপর জোর করে শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে বয়সে একজন শিশু আদর স্নেহ পাওয়ার কথা, খেলাধুলার করার কথা, সেই বয়সে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের চাপ। এতে তার শারীরিক মানসিক বিকাশে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। অল্প বয়সেই শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক বইয়ের সাথে কিন্ডারগার্টেনে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত আরও চার পাঁচ টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ে তো রয়েছে হোমওয়ার্কের জবরদস্তি। পরীক্ষার কথা না বললে নয়; সাপ্তাহিক, মাসিক, দ্বিমাসিক, ত্রৈমাসিক, , বার্ষিক ইত্যাদি পরীক্ষা তাদের পিছু ছাড়ে না।
আশি নব্বই দশকেও শিক্ষার্থী সকালে দুই তিন ঘন্টা পড়েছে, স্কুল কলেজে গিয়েছে, বিকেলে খেলাধুলা হৈহুল্লোড়, রাতে আবার কিছু সময় পড়াশোনা করতো। সেই সময়ে শ্রেনি কক্ষেই পুরো পড়াই শিক্ষক পড়িয়েছেন। কেউ চাইলে অংক ও ইংরেজি আলাদা করে শিক্ষকের কাছে পড়তো। এখন শিক্ষার্থী দের উপর চাপ প্রয়োগ করে তাদের মানসিক বিকাশে বাধা গ্রস্থ করা হচ্ছে। পুরনো দিনের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যবইয়ে শেখানো হতে নীতি নৈতিক মানবিক মূল্যবোধ। অথচ এখন এগুলো উপেক্ষিত। একজন মানুষ কে কি ভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে পড়ে তুলতে হয় পাঠ্যবইয়ে নেই আজ।
কিছু দিন আগেও আশি নব্বই দশকের শিশু শিক্ষায় ছিলো আমার পণ কবিতায় সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি । আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে। এমন মধুর বাণী আর শেখায় না শিক্ষা ব্যবস্থায়। ভালো হয়ে দিনের পথ চালার উৎসাহ এবং বয়সে বড়দের সন্মান করবো এমন কথা পাঠক্রম থেকে উঠে দিয়েছে। বড়দের সন্মান করাতো দূরের কথা ছোটদের কাছে ই অবহেলিত বয়োবৃদ্ধ গুরু জনে। সৃজনশীলতা, ডিজিটাল যুগে ছোটরাই আজ সবজান্তা শমসের। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। অনেক টাকা গাড়ি বাড়ি সম্পদশালী হোক সেটা অন্যায় পথে। যশ খ্যাতি সমাজ তোমায় বাহবা দিবে। এতে সমাজে অশুভ প্রতিযোগিতা বাড়েছে। দিন দিন সামাজিক অবক্ষয়ের চরম মহাসুখে মানুষ আজ। মনুষ্যত্ব মানবিকতা আজ বিলুপ্ত প্রায়। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাও বানিজ্যিক কারণে প্রকাশিত হচ্ছে।
বেশ কিছু দিন আগেও বইয়ের পাতায় ছিলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা আমি হব সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি। সুয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে, হয়নি সকাল, ঘুমোও এখন, মা বলবেন রেগে। অথচ আজ সন্তানেরা সকল বেলার পাখি তো দুরের কথা রাত জাগা পাখি হলেও বাবা মায়ের কথা শুনার মুল্য নেই। মায়ের রাগের মূল্য সন্তানের দেখার অবকাশ নেই। অভিভাবক আজ সন্তানের কাছে মূল্যহীন। সন্তান শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত হলেই বাবা-মার আশ্রয় স্থল বৃদ্ধাশ্রম। সমাজের চারদিকে তাকালেই এমন ঘটনা অহরহ দৃশ্যমান, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা যথাযথ মর্যাদা হারাচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কে শেখানো হয় না বাবা-মা 'র প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কর্তব্য। এতে
সন্তান ও পিতামাতার মাধুর্যময় সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের শৈশবে শিশুদের শেখানো হতো আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ। কবিতার মর্ম কথা ছিলো ফুল ফলের মৌসুমের, মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মধুর সম্পর্কের কথা। বর্তমানে সম্পর্ক গুলো ফিকে হয়ে গিয়েছে। পাঠ্যবইয়ে আত্নীয় সম্পর্ক বলে কিছুই নাই আজ। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক গুলো আজ বিলুপ্ত প্রায়। যে যার মতো নিজেকে নিয়ে মহা ব্যস্ত। যেন কারো জন্য কিছুই করার নেই। মানুষ সামাজিক জীব হয়েও আত্নীয় স্বজন নিকট আত্নীয় থেকে দূরে সরে গিয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের সন্মান বিশ্বাসে মানব জীবন আনন্দময় ও সুখে ভরে ওঠে এবং সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রমে এগুলো আজ উপেক্ষিত। ফলস্বরূপ সমাজে নানা অপকর্ম বেড়েই চলেছে। যা আগামীতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছে। যেখানে সমাজ ও পরিবারের শাসন নেই নেই কোনো অধিকার সে সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধংস অনিবার্য।
আশি-নব্বই দশকে বাংলার আবহমান চিত্র পড়ানো হতো পাঠক্রমে ।আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। নদী মাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার প্রাণপণে চেষ্টা ছিলো কবিতায়। হারিয়ে ফেলেছি গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবির ইতিহাস।
শিক্ষায় ফিরে আসুক বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য। যে ভুমিতে জন্ম গ্রহণ সেই ভুমির রূপ লাবণ্য জলদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আজ শেখানো হয় না। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক চর্চ্চা নিয়ে পাঠ্যবই সাজানো রং রূপে। এতে আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার্থী শিখছে পশ্চিমা সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠান। এতে বাংগালী জাতির জাতিসত্তা নষ্ট হচ্ছে। নীতি নৈতিকতা শেখার আতুর ঘর হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা উপকরণ, পরিবার অথচ এ গুলো আজ অবহেলিত। শিক্ষায় নতুন সংস্করণ করতে গিয়ে সব ধংসের পথে। শিক্ষায় ছিলো উৎসাহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রেরণা। কাল ভেদে আর কি পাবো এ সব কথা। সবাই আজ বিজাতীয় সাংস্কৃতিক চর্চ্চা মশগুল। কারণ শ্রেণি কক্ষে এদেশে আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয় না।
আধুনিক সভ্যতার আড়ালে ডিজিটাল যুগে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার চাইতে স্মার্ট ফোনের গেমসে বেশি আসক্ত। উন্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ফলে অশালীন কথা বার্তা শিখছে বাচ্চারা। নতুন শিক্ষাক্রমে বিতর্ক কেন ? পরীক্ষাবিহীন কারিকুলাম মানতে নারাজ অভিভাবকেরা শিক্ষাবিদদের দ্বিমত। নেই পাশ ফেল নেই গতানুগতিক পরীক্ষা ব্যবস্থা- তার পরিবর্তে রয়েছে বছর ব্যাপি ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শিক্ষা কারিকুলাম যেনো - আমরা সবাই রাজা আমাদের রাজার রাজত্বে। এক প্রকার পরিক্ষা বিহিন এই পাড়া শুনা মানতে অভিভাবকদের এক অংশ। অভিভাবকদের চাওয়া ফিরে আসুক শিক্ষাব্যবস্থায় হারানো অতীত। যেখান থেকে শিক্ষার্থী শিখবে আদবকায়দা, বড়দের সন্মান, ছোটদের স্নেহ করা সহ গুনীজনকে কদর করা শিখবে। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক ধরে রাখার পূর্ণ জ্ঞান লাভ করবে। শিখবে পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য।
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব কর্তব্য। কি ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানব জীবনের পূর্ণ সার্থকতা লাভ করা যায়। কারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই জীবনের চরম প্রাপ্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজের শুধীজন থেকে শুরু করে অভিভাবকদের একমাত্র চাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় যেন হারানো অতীত ফিরে আসে। এতে আদর্শ সমাজ বির্নিমানে ভুমিকা রাখবে। পুরনো দিনের শিক্ষায় ছিলো মনুষ্যত্ব গঠনের হাতিয়ার। বয়োবৃদ্ধ যারা এখনো বেঁচে তাদের কথা বার্তা চাল চলন থেকে ফুটে উঠে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় পুরনো দিনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাণ ফিরে আসুক এমনই প্রত্যাশা সর্বসাধারণের। যেখানে থাকবে মানবিকতা আর শিক্ষার্থী শিখবে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব। অতীতের শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু পুথিগত বিদ্যা নয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সৎ চিন্তা ও সৎ বাক্য - এসবের উপর জোর দেওয়া হতো। এখন পাঠ্যবই থেকে এগুলো হারিয়ে গিয়েছে।