নওগাঁর মান্দায় ১৬ বছরের কিশোরীকে ২০ বছরের নাবালিকা দেখিয়ে মামলা”

সোহেল রানা || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ রাত ১১:৫১, সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি : বিএমএফ টেলিভিশন

ছবি : বিএমএফ টেলিভিশন

‎নওগাঁর মান্দায় নাবালিকা স্কুল ছাত্রীকে সাবালিকা সাজিয়ে থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিবাদী পক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে  ভুক্তভোগী মোঃ রায়হান আলীর বড় ভাইয়ের নাবালিকা দশম শ্রেণীর ছাত্রী হুমায়রা খাতুন (তামান্না) ১৬ বছরের মেয়েকে ২০ বছর দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী বাদীপক্ষকে খুশি করতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মারামারি একটি মামলায় নাবালিকা মেয়েকে ফাঁসিয়েছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলু রহমান। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য রায়হান আলী পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের দ্বায়িত্বে থাকা এস আই ফজলু রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতেন। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এসআই ফজলু। পারিবারিক ঝামেলার সুযোগ নিয়ে তার ক্ষমতায় ফাঁসিয়ে দিলেন নাবালিকা মেয়েকে। সম্প্রতি পুলিশের এমন কাণ্ডে এলাকা জুড়ে সমালোচনার ঝাড় বইছে। শুধু তাই নয় গত (২৫ এপ্রিল) শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার পরানপুর ইউপির পরানপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে প্রতিবেশী দেলুয়ার গংরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেই সময় রায়হান আলী সহ চারজন গুরুতর আহত হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছিলো রায়হান আলী। হামলার ঘটনার একদিন পর সাংবাদিক রায়হান বাদী হয়ে মান্দা থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মারামারি চারদিন পর নাটকীয়ভাবে তিন মাস পূর্বে দুর্ঘটনায় আহত রেজাউল নামে এক ব্যক্তিকে মারামারি ঘটনায় আহত দেখিয়ে বৃদ্ধ নারী শিশু সহ ১৩ জনকে আসাম করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে দিয়ে মামলার বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ফজলু এবং মান্দা থানার ওসি মুনসুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন উপরের চাপ আছে মামলা নিতে হবে বলে জানান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আহত যুবক রেজাউল গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে তার আঙ্গুল হারান। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরেও তা আমলে নেননি । পুলিশ কৌশলে বলেন, তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু তদন্ত না করে রায়হানকে শায়েস্তা করতে হিতে বিপরীত ঘটনার জন্ম দিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী রায়হান আলী জানান, আমার পারিবারিক মারপিটের ঘটনার সাথে আহত রেজাউলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। রেজাউল ইসলাম চট্রগ্রামে কাজ করতে গিয়ে মামলা হওয়ার তিন মাস পূর্বে পায়ের দুটি আঙ্গুল হারায়। সেখানে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে এলাকাতে চলে আসে রেজাউল। এরপর গোপালপুর বাজারে ডাক্তার মনিরুল ইসলামের কাছে নিয়মিত ড্রেসিং করান। কাজ করতে গিয়ে আহত রেজাউল ইসলামকে দিয়ে নাটকীয় ভাবে থানায় মামলা করানো হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে বারবার জানানো হলে আমলে নেয়নি তারা। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এস আই ফজলুর আক্রোসে মিথ্যা মামলা জুড়ে দিয়েছে। আমার ভাতিজির বয়স ১৬ বছর তদন্ত না করে তাকে ২০ বছর দেখিয়েছে পুলিশ। ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবের দলের নেতা দেলোয়ার গংদের খুশি করতে মিথ্যা মামলায় আমার মা ও ভাতিজিকে আটক করেন পুলিশ। এমন আলোচিত ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে আছে এলাকার সাধারণ মানুষজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ৫/২/২০২৫ তারিখে চট্টগ্রামে দুর্ঘটনা হওয়ার পর রেজাউলকে এলাকার সকলে চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছেন।  অথচ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)ফজলু বিষয়টি জানার পরেও তদন্তে তা উল্লেখ করেননি। জন্ম দিয়েছেন আজব এক ঘটনা। শুধু তাই নয় ভুক্তভোগী পরিবারের ১৬ বছরের নাবালিকা মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করে আলোচিত হয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে উপজেলার পরানপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জানি। রেজাউল চট্রগ্রামে কাজ করতে গিয়ে পায়ের দুটি আঙ্গুল হারিয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসী সহযোগীতা করেছেন। গভীর ভাবে তদন্ত করে বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা উচিত ছিল। এ ঘটনা মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুর রহমান বলেন, আমি এজাহার দেখে মেয়ের বয়স দিয়েছি। এছাড়া মেডিকেল থেকে তারা এমসি এনেছে। কোন তদন্ত ছাড়া শুধুমাত্র এজাহার দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায় কিনা এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। দূর্ঘটনায় আহত যুবক সম্পর্কেও তিনি কথা বলেননি। এ বিষয়ে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান জানান, মামলার আয়ু যেহেতু ফজলু সেহেতু তিনি ঘটনা সব কিছু জানেন।  তদন্ত না করে নাবালিকাকে তার ইচ্ছে মতন বয়স বাড়িয়ে সাবালিকা বানালে এর দায় তাকে নিতে হবে। 

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়