বাইরে থেকে দৃঢ়, ভিতরে ভাঙা—স্ত্রীর অবহেলায় মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য পুরুষ

দাম্পত্যের নীরব ট্র্যাজেডি: স্ত্রীর অবহেলায় নিঃশেষ পুরুষ

জহুরুল ইসলাম ,প্রধান সম্পাদক || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ রাত ১১:৩১, সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাইরে লড়াই করে চলা পুরুষরা ঘরে ফিরে যখন ভালোবাসার উষ্ণতা না পেয়ে অবহেলার ঠাণ্ডা দেয়ালে ধাক্কা খান, তখন তারা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর উদাসীনতা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস ও জীবনবোধকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সমাজে পুরুষের বেদনা অনুচ্চারিত—তবু বাস্তবে তারা ভেতর থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।


 

বাইরে থেকে তারা দৃঢ়, স্থির, বলিষ্ঠ। সমাজে, অফিসে, রাস্তায়—প্রতিদিন লড়াই করে তারা নিজের, পরিবারের, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য।

কিন্তু ঘরে ফিরে যখন ভালোবাসার হাসির বদলে মেলে নীরবতা, উদাসীনতা আর অবহেলা—তখন সেই পুরুষটি ভিতর থেকে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।

একজন পুরুষের দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তার স্ত্রী।

একটু স্নেহ, দুটো মিষ্টি কথা, একটা আশ্বাস—এসবই তার ক্লান্ত মন ও শরীরের প্রলেপ। কিন্তু যখন সেই আশ্রয়েই ভালোবাসার জায়গায় আসে শীতলতা, অবহেলা আর দূরত্ব—তখন পুরুষের ভেতরের পৃথিবীটা নিঃশব্দে ধসে পড়ে।

“পুরুষরা কাঁদে না—কিন্তু তারা ভাঙে”:

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজ এখনও পুরুষের মানসিক যন্ত্রণাকে গুরুত্ব দেয় না।

সমাজ শেখায়—“কাঁদা মানে দুর্বলতা”, “অভিযোগ মানে অক্ষমতা”, “বেদনা মানে পুরুষোচিত নয়।”

ফলে পুরুষ কাঁদে না, শুধু চুপচাপ হয়ে যায়—ধীরে ধীরে ভিতরটা নিঃশেষ হয়ে যায়।


মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা রহমান বলেন—

“দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর অবহেলা বা মানসিক দূরত্ব একজন পুরুষকে গভীর মানসিক আঘাত দেয়।

তারা সেটা প্রকাশ করে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে হারায় আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা ও জীবনের আনন্দ।”


অবহেলার শুরু হয় নীরবতা দিয়ে:

অবহেলা সবসময় ঝগড়া দিয়ে শুরু হয় না—এটা শুরু হয় নীরবতা দিয়ে।

যখন স্ত্রীর মুখে অনেকদিন শোনা যায় না “ভালোবাসি”, যখন চোখে থাকে না আগের মতো মায়া, যখন হাসি হারিয়ে যায়, যখন কাঁধে হাত রাখার উষ্ণতা ম্লান হয়ে যায়— তখনই শুরু হয় মানসিক দূরত্বের সূক্ষ্ম দেয়াল।


একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন— “সারাদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরি শান্তির আশায়। কিন্তু দেখি স্ত্রী ফোনে ব্যস্ত, আমার দিকে তাকায়ও না। তখন মনে হয়—এই ঘরটা ঘর নয়, এক নীরব কারাগার।”

সংগ্রামের পর ঘরে অবহেলা—সবচেয়ে বড় পরাজয়: 

প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে একজন পুরুষ লড়ছে হাজারো যুদ্ধ—

অফিসের চাপ, রাস্তায় জ্যাম, সংসারের দায়, ভবিষ্যতের চিন্তা।

কিন্তু ঘরে ফিরেই যখন তাকে স্বাগত জানায় ঠাণ্ডা মুখ আর নীরবতা

তখন সেই মানুষটি হারিয়ে ফেলে সব শক্তি, সব প্রেরণা।


মনোবিজ্ঞানীরা এটিকে বলেন “ইমোশনাল বার্নআউট”—

এক ধরনের মানসিক ক্লান্তি, যা ধীরে ধীরে মানুষকে নিঃশেষ করে দেয়।


গবেষণা বলছে—অবহেলা এক ধরনের নীরব নির্যাতন-

২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে—বাংলাদেশে বিবাহিত পুরুষদের ৬৩ শতাংশ স্বীকার করেছেন, স্ত্রীর মানসিক অবহেলা ও ঠাণ্ডা আচরণ তাদের জীবনের প্রধান মানসিক চাপের উৎস। তারা জানান, স্ত্রীর ভালোবাসা ও সহানুভূতি হারিয়ে গেলে জীবনের অর্থই হারিয়ে যায়।


অবহেলার ভয়াবহ ফলাফল-

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে—দীর্ঘমেয়াদী অবহেলা একজন পুরুষের আত্মবিশ্বাস, কর্মক্ষমতা ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে।

অবহেলার নিঃশব্দ লক্ষণগুলো হলো:

  • স্বামীর চুপচাপ হয়ে যাওয়া
  • আগের মতো হাসি না থাকা
  • কাজে অনীহা
  • মনোযোগের অভাব
  • নিঃসঙ্গতা ও হতাশা


ভালোবাসা হারালে সম্পর্কও হারায় আলো: 

যখন স্বামী-স্ত্রী একই ছাদের নিচে থাকেন কিন্তু মনের দূরত্ব বাড়ে, তখন সম্পর্ক শুধু অভ্যাসে টিকে থাকে—ভালোবাসায় নয়।

অভ্যাসে টিকে থাকা সম্পর্ক একসময় শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে ওঠে।


নারীর দায়িত্বও কম নয়

একজন নারী যেমন ভালোবাসা চান, তেমনি একজন পুরুষও ভালোবাসার প্রয়োজন বোধ করেন।নারীর একটুখানি হাসি, বোঝাপড়া ও যত্ন একজন পুরুষের ক্লান্ত পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।


শেষ কথা:

স্ত্রীর মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানেই স্বামীর একাকিত্বের শুরু।

স্ত্রীর অবহেলা মানেই স্বামীর আত্মবিশ্বাসের মৃত্যু।

আর স্ত্রীর ভালোবাসা মানেই—একজন পুরুষের জীবনের পুনর্জন্ম।


 

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়