ভোলার মাটি ও মানুষের নেতা আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহিম

জহুরুল ইসলাম : || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:২১, রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ভোলার দক্ষিণে বিস্তীর্ণ চর, নদী আর মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নাম—হাফিজ ইব্রাহিম।

ভোলার দক্ষিণে বিস্তীর্ণ চর, নদী আর মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নাম— হাফিজ ইব্রাহিম।

রাজনীতিতে তাঁর পরিচয় কেবল একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে নয়; বরং একজন জনপ্রিয়, কর্মঠ, এবং তৃণমূলনির্ভর রাজনীতিক হিসেবে তিনি আজও ভোলার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোলার রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় একটাই নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে— “হাফিজ ভাই আসলে আমরা বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াব।”

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতিতে যোগ দেন। ধীরে ধীরে তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।

দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন আসন (ভোলা-২) ছিল তাঁর রাজনৈতিক ঘাঁটি। এখানকার সাধারণ মানুষ তাঁকে চিনত একজন সহজ-সরল, মাটির মানুষ হিসেবে।

এমপি হিসেবে তাঁর প্রথম জয়:

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আর ভোলা-২ আসনে জয় পান আলহাজ্ব  হাফিজ ইব্রাহিম।

তখন ভোলার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। মানুষ প্রথমবারের মতো একজন স্থানীয়, সৎ ও শিক্ষিত প্রতিনিধি পায়, যিনি উন্নয়ন ও সেবাকে রাজনীতির হাতিয়ার করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভোলার সড়ক, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়।

দৌলতখান কলেজ, বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে চরাঞ্চলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর উদ্যোগ— সবকিছুর পেছনে ছিল তাঁর নিরব কিন্তু কার্যকর ভূমিকা।

মানুষের মুখে  হাফিজ ইব্রাহিম :


ভোলার টবগী ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ মোসলেহ উদ্দিন বাবলু পণ্ডিত বলেন“আপনারা জানেন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলার গণমানুষের নেতা আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহিম, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জাতীয় সংসদে ভোলা-২ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ভোলায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, রাস্তা, কালভার্ট ও ব্রিজসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এছাড়াও ভোলা-তে একটি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মেঘনার হাত থেকে ভোলাকে বাঁচানোর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন।

“আগামী সংসদে আমরা তাকে পুনরায় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করলে ভোলার মাটি ও মানুষের প্রাণের দাবি অনুযায়ী ভোলা–বরিশাল সেতু, ভোলায় মেডিকেল কলেজ, প্রতিটি বাড়িতে গ্যাস সংযোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করবেন, ইনশাল্লাহ। তাই ভোলা-২ আসনের সর্বস্তরের জনগণ আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহিমকে পুনরায় এমপি হিসেবে দেখতে চায়।”

ভোলার বোরহানউদ্দিনের গ্রামের  কৃষক আবদুর রহিম বলেন—আমরা কোনো এমপি’কে এত সহজে পাইনি যতটা হাফিজ ভাইকে পাইতাম। হাটে-বাজারে দেখা হলে তিনি থামতেন, খোঁজখবর নিতেন।”

দৌলতখান এর এক কলেজ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন—রাজনীতিক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ‘শোনার ক্ষমতা’। তিনি বিরোধী দলের মানুষকেও সম্মান করতেন।”

স্থানীয় এক তরুণ ভোটার জানান—আমরা যারা নতুন ভোটার, তারা রাজনীতিতে তেমন আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু হাফিজ ভাই মাঠে নামলে বিএনপি প্রাণ ফিরে পায়।”


উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতা:

তাঁর সময় ভোলা-২ আসনে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। দৌলতখান-ভোলা সদর মহাসড়কের সংস্কার, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ, এবং চরাঞ্চলে বাঁধ সংস্কারে তিনি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আনেন।

বিদ্যুৎ খাতে অবদান:

২০০৩-০৫ সালের মধ্যে দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনের বেশ কয়েকটি গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসে। স্থানীয় মানুষ আজও বলেন— “বিদ্যুৎ আসার দিনটা যেন ঈদের দিন ছিল।”

শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ:

তিনি শিক্ষা খাতেও অনন্য ভূমিকা রাখেন। বেশ কিছু স্কুল ও কলেজের ভবন নির্মাণে তাঁর উদ্যোগে স্থানীয় এমপির তহবিল ব্যবহার হয়।

এছাড়া অসহায় পরিবারকে সাহায্য, চরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ, এমনকি ব্যক্তিগত অর্থে অসুস্থদের চিকিৎসায় সহায়তা— এই সব কাজ তাঁকে জনগণের খুব কাছের মানুষে পরিণত করে।

দলীয় নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা:

বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর অবস্থানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাধিক সূত্র জানায়— হাফিজ ইব্রাহিমই ছিলেন “সংগঠন রক্ষার শেষ ভরসা” যখন অনেকেই মাঠ ছাড়ে।

বিএনপির দৌলতখান উপজেলার  বিএনপি নেতা রফিকুল  ইসলাম বলেন—দলের সংকটে তিনি পাশে ছিলেন।

চ্যালেঞ্জের সময়েও দৃঢ় অবস্থান:

২০০৮ সালের নির্বাচন তাঁর জীবনের একটি কঠিন অধ্যায়। বিএনপি তখন বিরোধী দলে, আর তিনি নানা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েন।

তবুও তিনি রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি। তাঁর ওপর একাধিক মামলা হলেও তিনি কখনও আত্মসমর্পণ করেননি আদর্শ থেকে।

ভোলার রাজনীতি তখনও তাঁকে কেন্দ্র করেই ঘুরেছে। তাঁর উপস্থিতি ছিল বিএনপির তৃণমূলের প্রেরণা।

একজন ব্যবসায়ী ভোটার বলেন—যখন অন্যরা ভয় পেত, তখন তিনিই মাঠে ছিলেন। বিএনপি মানে তখন হাফিজ ভাই।”

জনগণের সঙ্গে মেলবন্ধন:

তাঁর বাড়ির দরজা সব সময় খোলা থাকত। সকাল থেকে রাত অবধি মানুষ আসত, কেউ কাজের আবেদন নিয়ে, কেউ শুধু দেখা করতে।

তিনি কখনও কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। এই আচরণই তাঁকে ভোলার মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন দিয়েছে।

ভোলার চরাঞ্চলে কাজ করা এক নারী এনজিও কর্মী বলেন—“তাঁর কাছে গেলে মনে হয়, নেতা নন, বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি।”

আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তৃণমূল প্রত্যাশা:

ভোলার মানুষ এখন নতুন নির্বাচনের অপেক্ষায়। এলাকায় বিএনপির ব্যানার আবার দেখা যাচ্ছে, পোস্টারে লেখা—

“আবার চাই হাফিজ ভাই।”

তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, তিনি তৃণমূল পর্যায়ের পুনর্গঠন শুরু করেছেন। ইউনিয়নভিত্তিক কমিটি, যুব ও ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি জোরদার করা হচ্ছে।

দৌলতখানের তরুণ কর্মী মিজানুর রহমান বলেন—নির্বাচন হলে মানুষ হাফিজ ভাইয়ের নামেই ভোট দেবে। কারণ তাঁর বিকল্প এখানে কেউ নেই।”

প্রতিদ্বন্দ্বীদের চোখে হাফিজ ইব্রাহিম:

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাঁকে সম্মান করেন।

ভোলার এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন— “তিনি শত্রু হিসেবেও সম্মান পাওয়ার যোগ্য । তার মতো মার্জিত রাজনীতিক এখন কম।”

এটাই তাঁর রাজনীতির শক্তি — বিরোধী দলও তাঁকে মূল্যায়ন করে।

সাংবাদিক বিশ্লেষণ:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, হাফিজ ইব্রাহিম হচ্ছেন সেই রাজনীতিক যিনি তৃণমূলের ভাষা বোঝেন।

বিএনপি যদি মাঠে শক্ত অবস্থানে ফিরতে চায়, তাহলে তাঁর মতো নেতারাই হবে মূল চালিকা শক্তি।

ঢাকার এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন—

“ভোলার রাজনীতিতে হাফিজ ইব্রাহিম এখনো ‘ব্র্যান্ড’। মানুষ তাঁকে দেখলে বিএনপি মনে পড়ে, আর বিএনপিকে দেখলে তাঁর মুখ মনে পড়ে।”

মানবিক মুখ:

রাজনীতি ছাড়াও তিনি পরিচিত একজন দানশীল ও মানবিক মানুষ হিসেবে।

বন্যা, নদীভাঙন বা দুর্গত মানুষের পাশে সব সময় থেকেছেন।

চিকিৎসা সহায়তা, স্কুলে বই বিতরণ, শীতবস্ত্র দান— এগুলো তিনি করতেন কোনো প্রচারণা ছাড়াই।

চরফ্যাশনের এক বৃদ্ধা নারী বলেন—

“ওনার কাছ থেকে একবার কম্বল পেয়েছিলাম, এখনো সেই উষ্ণতা মনে পড়ে।”
নীরব যোদ্ধার মতো ফিরে আসা:

রাজনীতি তাঁকে অনেক কিছু দিয়েছে, আবার কেড়ে নিয়েছেও।

তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। আজও তিনি মাঠে আছেন, মানুষের মাঝে আছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন একেকটি সংগ্রামের ইতিহাস।

ভোলার মানুষ অপেক্ষায় — আবার যদি হাফিজ ভাই জিতে আসেন, তাহলে ভোলা আবার আগের মতো জেগে উঠবে।”

সমাপনী বিশ্লেষণ:

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন নেতা কমই আছেন যাঁরা একইসঙ্গে সৎ, শিক্ষিত, জনপ্রিয় এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য।

আলহাজ্ব  হাফিজ ইব্রাহিম সেই বিরল প্রজাতির একজন, যিনি রাজনীতিকে পেশা নয়, দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন।

তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সহজ — “রাজনীতি মানে মানুষের কল্যাণ।”

ভোলার মানুষ আজও সেই কথাটি মনে রেখেছে।

নদীভাঙনের মতোই রাজনীতি হয়তো তাকে বহুবার আঘাত করেছে, কিন্তু তিনি এখনও দৃঢ়, অবিচল এবং অগ্রযাত্রায় বিশ্বাসী।

যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে তাঁকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়, তাহলে ভোলা-২ আসনে তিনি শুধু প্রার্থী নন, তিনি হবেন একটি প্রতীকের নাম —

সততা, সাহস আর জনসেবার প্রতীক।

শেষকথা:

ভোলার মানুষ যেমন নদীর স্রোতে ভেসেও টিকে থাকে, তেমনি হাফিজ ইব্রাহিমও রাজনীতির ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও টিকে আছেন মানুষের হৃদয়ে।

ভোট যেদিন হবে, সেদিন হয়তো তাঁর নামই উচ্চারিত হবে সবচেয়ে বেশি—

“আমরা চাই হাফিজ ভাই!”

লেখক রোটারিয়ান জহুরুল ইসলাম 
প্রধান সম্পাদক 
বিএমএফ টেলিভিশন

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়