মান্দায় সওজের জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট

সোহেল রানা নওগাঁ প্রতিনিধি: || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৪০, শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

নওগাঁর মান্দায় ফেরিঘাট ব্রিজের নিচে সড়ক ও জনপদের কোটি টাকার জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়দানকারী উপজেলা প্রতিনিধি রিপন ,ফাইম ও সজিব নামে তিন জনের বিরুদ্ধে।

নওগাঁর মান্দায় ফেরিঘাট ব্রিজের নিচে সড়ক ও জনপদের কোটি টাকার জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়দানকারী উপজেলা প্রতিনিধি রিপন ,ফাইম ও সজিব নামে তিন জনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, রিপন,ফাইম ও সজিব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে  সড়ক জনপদের কোটি টাকা মূল্যের  জায়গা দখলের পর পাঁকা স্থাপনা করে রেস্টুরেন্ট তৈরি করেছেন। জমি দখল ও রেস্টুরেন্ট তৈরির পর ডিসি ও ইউএনও নামে "নাম ফলক" তৈরি করেছেন তারা। এরপর গত ১৪ জুলাই "মান্দা রিভার কোর্ট" নামে রেস্টুরেন্টে উদ্বোধন করান ইউএনওকে দিয়ে। সওজের সরকারি জমিতে রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালকে। তবে গত ১৪ই জুলাই জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল মান্দাতে আসলেও "রিভার কোর্ট" রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করতে তিনি জাননি সেখানে বলে জানা গেছে। স্থানীয় এলাকালাবাসীরা বলেন, মান্দার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের তিন প্রতিনিধি এই রেস্টুরেন্টের মালিক। তাদের বাড়ি মান্দা উপজেলায় হলেও তারা এখানে থাকেনা। আমরা শুনেছি তারা আগামী ১শত বছরের জন্য সওজের কাছ থেকে এটি লিজ নিয়েছেন।  তবে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা বৈষম্য বিরোধী সংগঠনের অন্য নেতারা এর নিন্দা জানিয়েছেন। শুধু জমি দখল করে খ্যান্ত হয়নি তারা।  নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাট ব্রিজের সাইড ওয়াল কেটে রেস্টুরেন্টে নামার রাস্তা তৈরি করেছেন। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাট ব্রিজ। যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় দূর্ঘটনা।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দানকারী প্রতিনিধি রিপন ও ফাইম মোবাইল ফোনে বলেন, আমরা রেস্টুরেন্ট করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় জায়গাটি দখল নিয়ে রেস্টুরেন্ট করেছি। প্রথমে জায়গাটি লিজ নিয়েছে এমন কথা বলার পর রিপন বলেন,  সড়ক বিভাগ এটি লিজ দেয়নি। জায়গাটি  লিজের জন্য আবেদন করেছি । সওজ যদি আমাদেরকে উচ্ছেদ করে তাহলে আমরা জায়গাটি ছেড়ে দিবো। আর যতদিন উচ্ছেদ হবেনা আমরা রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করবো।  বৈষম্যের বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যুক্ত আরেক জন রেস্টুরেন্ট মালিক ফাইম বলেন,উপজেলার ফেরিঘাটে সড়ক ও জনপদের মান্দা অফিসের খুব কাছে আমাদের রেস্টুরেন্ট।  সওজের কর্মকর্তারা যদি অনুমতি না দেয় তাহলে আমরাতো পাকা ঘর নির্মাণ করতে পারতাম না। আমরা সেখানে যেতেই পারতাম না। ইউএনও স্যার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে আমরা রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধন করেছি। মান্দার সকল অফিসার ইউএনও ও বৈষম্যে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এ বিষয়টি জানেন। কথা বলার এক পর্যায়ে ফাইম উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

রাতের বেলা সওজের জায়গাতে রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানের একটি স্হির চিত্রতে দেখা যায়, মান্দা উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির আমিনুল ইসলাম,বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইকরামুল বারী টিপু,বিএনপির শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাম্মেল হক মুকুল,মান্দা থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মনসুর রহমান,মান্দা উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও কুসুম্বা ইউপির চেয়ারম্যান নফেল আলী মন্ডল সহ আরো অনেককে। রেস্টুরেন্টটির উদ্বোধন শেষে তারা ওখানে নৈশ্য ভোজ করেন বলে জানা গেছে।

মান্দা উপজেলা সাবেক বৈষম্য বিরোধী সংগঠনের অন্য প্রতিনিধি শামীমা আক্তার সাথী,জাকারিয়া সহ কয়েকজন বলেন, আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন থেকে কোন রেস্টুরেন্ট লিজ নেইনি।  এমনকি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের আগে সড়কের জায়গা নেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। রিপন,ফাইম ও সজিব সংগঠনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সদ্য বদলীকৃত ইউএনও শাহ আলম স্যারকে দিয়ে তার বদলীর শেষ বেলাতে সড়ক ও জনপদের জায়গা তাদের নামে সুকৌশলে দখল করেছে।  এভাবে সরকারি জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট করার কারণে আমাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারণে আমাদেরকে সর্বমহলের কাছে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন আগে তারা আমাদের ম্যাচেনজার গ্রুপে শুধু একটা ম্যাচেজ দিয়েছিল। তারা কিভাবে  ইউএনও স্যারের কাছ থেকে রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করে নিয়েছে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মান্দা প্রতিধিনি হিসেবে বিষয়টি অবগত না।

মান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল ইসলাম বাদল বলেন, আমার বাড়ি ফেরিঘাটের পাশেই। এতদিন শুনেছি বিএনপি বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গাতে জমি দখলের অভিযোগ উঠে। এখন যে চোখের সামনে সওজের জায়গাতে বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হঠাৎ করে ব্যাঙের ছাতার মতন পাকা স্থাপনা করে জাকজমকপূর্ণ রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে তা এত দিনেও প্রশাসনের নজরে আসেনি কেন? আমার জানা মতে তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি জমি দখল করে রেস্টুরেন্ট করেছে। সওজ ও উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগার উপর সরকারি জমিতে নির্মাণকৃত রেস্টুরেন্ট কবে দখল মুক্ত হবে?

মান্দা উপজেলার দ্বায়িত্বে থাকা নওগাঁ সড়ক ও জনপদের উপ প্রকৌশলী নূর আলম সিদ্দিক বলেন, রেস্টুরেন্ট করার জন্য সড়ক ও জনপদ থেকে ফেরিঘাট ব্রিজ সংলগ্ন জায়গাটি কোন প্রকার লিজ দেওয়া হয়নি। তবে জায়গাটির জন্য একটি আবেদন দেওয়ার কথা হয়েছিল এরপর আর আবেদন জমা পড়েনি অফিসে। সড়ক ও জনপদের জায়গা অবৈধ ভাবে উপজেলা প্রশাসন দখল নিয়ে কাউকে দিতে পারেনা। যদি সড়ক ও জনপদের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেস্টুরেন্ট তৈরি করে থাকে তাহলে আমাদের সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে দেখে তাদেরকে নোটিশ করা হবে। এর পরে জয়গাটি ফাঁকা না হলে ডিসি স্যারের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন,ফেরিঘাট "মান্দা রিভার কোর্ট" রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের জন্য "নাম ফলকে" আমার নাম ব্যবহার করা ও এই রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে আমি অবগত না।

Share This Article

আরো পড়ুন  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়