গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ইসরায়েলের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। || বিএমএফ টেলিভিশন
সেনা অভিযান আরও তীব্র ও পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির জন্য নতুন চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনা অভিযান আরও তীব্র ও পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির জন্য নতুন চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজা সিটি ও জাবালিয়ার বাসিন্দাদের দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে চলে যেতে বলা হয়েছে। খবর বিবিসির।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আল-মাওয়াসির কথিত ‘নিরাপদ জোনে’ তিন শিশু ছিল বলে তাদের পরিবার জানিয়েছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “এই মুহূর্তে হামাসের সঙ্গে বন্দি মুক্তির জন্য চুক্তি করছে”।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র অবিচাই আদ্রেয়ি রোববার বলেন, “উত্তর গাজায় সন্ত্রাসী ও তাদের অবকাঠামো ধ্বংসে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
বাসিন্দারা ও মেডিকরা জানান, রোববার ভোরে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শুধু রোববারই অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে।
মেডিকরা জানান, খান ইউনিসের কাছে আল-মাওয়াসিতে ঘুমন্ত অবস্থায় পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যে তিন শিশু ছিল। নিহতদের মা ইমান আবু মারুফ বলেন, “আমরা মাটিতে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখনই আমাদের ওপর বোমা ফেলা হয়। আমার সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে।”
নিহতদের বাবা জেয়াদ আবু মারুফ জানান, এক মাস আগে ইসরায়েলি নির্দেশে তারা আল-মাওয়াসির ‘নিরাপদ জোনে’ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বিবিসিকে আইডিএফ জানিয়েছে, তারা নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া মন্তব্য করতে পারছে না, তবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রোববার উত্তর গাজায় ২০ বছর বয়সী ইসরায়েলি সেনা সার্জেন্ট ইস্রায়েল নাতান রোসেনফেল্ড নিহত হয়েছেন।
এই হামলার মধ্যেই মধ্যস্থতাকারীরা নতুন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির প্রচেষ্টা শুরু করেছে। কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা আশা প্রকাশ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ চুক্তি এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
রোববার নেতানিয়াহু শিন বেতকে (ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) বলেন, “ইরানের ওপর বিজয় আমাদের জন্য অনেক সুযোগের দ্বার খুলেছে, প্রথমেই বন্দি মুক্তি।”
ট্রাম্প বলেছেন, “গাজায় চুক্তি হতে পারে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই।” তবে মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়, যখন ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করে।
মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করেছিল। ১১ সপ্তাহ পর মার্কিন মিত্রদের চাপ ও খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় কিছুটা সহায়তা চালু করে। এ সময় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত নতুন সংস্থা তৈরি করা হয়, যা বিতর্কিত হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র জুলিয়েট তৌমা বলেন, “এই নতুন সহায়তা ব্যবস্থাই মৃত্যুর ময়দান।” তিনি জানান, সুষ্ঠু সহায়তা বিতরণের একমাত্র উপায় জাতিসংঘের মাধ্যমে।
ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তখন থেকে ৫৬ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে।