অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝতে ব্যর্থ: আল-জাজিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:২৬, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের এক বছর পর অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। গেল এক বছরে আন্দোলনে নিহতদের হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি না থাকায় হতাশ নিহতদের পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা। অনেকের মতে, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে জুলাই সনদ ও নির্বাচনী কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী থেকেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে সমালোচনা উঠে এসেছে।

জুলাই আন্দোলনের এক বছর পর অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। গেল এক বছরে আন্দোলনে নিহতদের হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি না থাকায় হতাশ নিহতদের পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা। অনেকের মতে, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে জুলাই সনদ ও নির্বাচনী কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী থেকেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে সমালোচনা উঠে এসেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তীব্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। আন্দোলনের তিন দিনের মাথায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি—ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও দমন-পীড়নমুক্ত করে নতুন করে গড়ে তোলার প্রত্যাশা।

তবে আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের মতে, ন্যায়ের সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি। নিহত শিক্ষার্থী ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাচ্চারা যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিল, সেই পরিবর্তন, সেই দুর্নীতিমুক্ত দেশ এখনও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তার খালা নাজিয়া খান বলেন, আমার একটাই আশা, আমি যেন খুনিকে দেখে যেতে পারি।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সরকারের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন ছিল। তার ভাষায়, যদি এই মামলাগুলো সময়মতো অগ্রাধিকার পেত, তাহলে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিল হতে পারত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্ত শেষ হয়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

সরকার সাধারণ মানুষের মতামত না নিয়ে এলিটদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান। তিনি বলেন, সরকারের সাধারণ জনগণের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। তারা মূলত বিশেষজ্ঞ ও এলিটদের পরামর্শেই চলছেন। জনগণের মতামত নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব পাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও একই সুরে সমালোচনা করা হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূস সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও দেশজুড়ে এখনও চলমান মব ভায়োলেন্স বা গোষ্ঠীগত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না প্রশাসন, ফলে সরকারে আস্থাও কমছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

অধ্যাপক আসিফ এম শাহান আরও বলেন, বর্তমানে রাজনীতির অত্যন্ত নোংরা খেলা চলছে এবং জনগণের সামনে কোনো দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। বরং আরও হতাশা বাড়ছে। তার মতে, একটি হতাশার অধ্যায় শেষ হতে না হতেই আরেকটি হতাশার অধ্যায় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।

প্রথম বর্ষপূর্তিতে দাঁড়িয়ে অনেকেই মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বড় কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন এনে জনগণের আশাবাদকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি। আন্দোলনের মূল্য যে প্রাণগুলো দিয়েছিল তরুণরা, তাদের জন্য ন্যায়বিচারের আশাটুকুও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়