বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক চক্রান্তে কলঙ্কিত: খুলনা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ

মিনহাজুর রহমান মাহিম ইবি প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ রাত ০৮:৫১, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক অবস্থান, কার্যক্রম, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ। বুধবার (১৯ জুন) বেলা সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলানায়তনের ক্যাফেটেরিয়ায় ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা বিভাগ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এই সম্মেলনে ৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।তিন দফা দাবিগুলো হলো— ১. নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করতে হবে, কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবে না। ২. জেলার নেতৃবৃন্দকে প্রার্থীতার পাশাপাশি ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে। ৩. কেন্দ্রীয় যেসকল সমন্বয়ক কোন রাজনৈতিক দলে নেই তাদেরকে প্রার্থিতা ও ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে  খুলনা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সকল স্তরের ছাত্র জনতার ত্যাগ ও বিসর্জনের ফলাফল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য আমরা এখন পর্যন্ত দুই হাজার শহীদ ভাই, লক্ষাধিক পঙ্গুত্ববরণকারী ভাই এবং জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিতে পারি নাই। অন্যদিকে অস্ত্র হাতে আওয়ামী পেটুয়া পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আজ আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী সংগঠন এবং তার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সেলটারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে যা জুলাই ও আগস্ট শহীদদের সাথে গাদ্দারি করার শামিল।’

খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কবৃন্দ  বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেভাবে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বুলেটের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল তেমনি জুলাই পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে নিয়োজিত থেকে দেশকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছেন। জুলাই পরবর্তী সময়ে দেশে যখন কিছু স্বার্থান্বেষী-সুবিধাবাদী মহল দেশের শোষণ-লুটতরাজ ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল ঠিক তখনই ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে জুলাই পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করে।’

‘দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, ফ্যাসিবাদ পতনের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ অভিভাবকহীন এবং সুবিধাবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে গিয়েই যে সংগঠন হারালো মেধাবী তরুণ-নিষ্পাপ তাজা প্রাণগুলোকে, সেই সংগঠনই আজ ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের কাছে ধরাশায়ী হতে চলেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীজ যে সাহসী নির্ভীক তরুণ ছাত্র নেতারা বুনেছিলো সেই ছাত্র নেতারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক রূপরেখা না দিয়েই এই সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। পরবর্তীতে অভিভাবকহীন এই সংগঠনের সুবিধাবাদী-স্বার্থান্বেষী এক শ্রেণির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেহেতু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিহীন একটি ছাত্র সংগঠন, সেহেতু সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বস্থায়ী ব্যক্তিদের প্রভাব কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।’—বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়।

তারা আরো বলেন , ‘সংগঠনের আসন্ন নির্বাচনে যেসব নেতৃবৃন্দ গণঅভ্যুত্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন অর্থাৎ জেলা আহ্বায়ক কমিটি থেকে প্রার্থীতার সুযোগ রাখলেও ভোটাধিকার ব্যবস্থার কোন সুযোগ রাখেনি, যা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। এছাড়াও জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শুরুতে তৎকালীন ১৫৮ জন সমন্বয়কের মধ্যে যারা এখনো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকেও প্রার্থিতা ও ভোটাধিকারের সুযোগ রাখেনি।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যেসব আপামর ছাত্র জনতা বিশেষ করে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীসহ যারাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল তাদের সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে অরাজনৈতিক ও লেজুড়বৃত্তিহীন ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তমুক্ত একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক তানভীর মন্ডল, যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান, মাগুরা জেলার সমন্বয়ক ইঞ্জি. সেলিম, হাসিবুর রহমান, নড়াইলের আব্দুল রহমানসহ সংগঠনের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়