চলনবিলের 'পল্লা উৎসব': রাতের আঁধারে মাছ ধরার এক রোমাঞ্চকর ঐতিহ্য

মোঃ আশিক মিয়া আটপাড়া নেত্রকোনা প্রতিনিধি || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৩৫, সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২
ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

ছবি: বিএমএফ টেলিভিশন।

তাড়াশ সিরাজ গঞ্জ বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল, চলনবিল, শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং এর সমৃদ্ধ গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্যও পরিচিত। এই ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো 'লাইট ফেলে মাছ ধরা' বা 'পল্লা উৎসব'। বর্ষার শেষে বিলের পানি যখন কমতে শুরু করে, তখন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা দলবদ্ধভাবে রাতের আঁধারে আলো ব্যবহার করে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এটি সাধারন মাছ ধরা নয়, বরং এটি একটি উৎসব, যা স্থানীয় মানুষের মধ্যে আনন্দ ও উদ্দীপনা তৈরি করে।

তাড়াশ সিরাজ গঞ্জ বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল, চলনবিল, শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং এর সমৃদ্ধ গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্যও পরিচিত। এই ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো 'লাইট ফেলে মাছ ধরা' বা 'পল্লা উৎসব'। বর্ষার শেষে বিলের পানি যখন কমতে শুরু করে, তখন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা দলবদ্ধভাবে রাতের আঁধারে আলো ব্যবহার করে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এটি সাধারন মাছ ধরা নয়, বরং এটি একটি উৎসব, যা স্থানীয় মানুষের মধ্যে আনন্দ ও উদ্দীপনা তৈরি করে।

পল্লা উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো মাছ ধরার বিশেষ পদ্ধতি। শিকারিরা শক্তিশালী টর্চলাইট বা অন্য কোনো উজ্জ্বল আলোর উৎস ব্যবহার করে বিলের তলদেশে মাছ খুঁজে বের করেন। আলোর প্রতি মাছের এক ধরণের আকর্ষণ থাকে, ফলে তারা আলোর কাছাকাছি চলে আসে বা আলোতে স্থির হয়ে যায়। এই সুযোগে শিকারিরা 'পল্লা' বা 'চৈতা' নামে পরিচিত এক ধরণের হাত জাল ব্যবহার করে দ্রুত মাছ ধরে ফেলেন। এই পদ্ধতিতে সাধারণত শোল, টাকি, শিং, মাগুর-এর মতো দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। মাছটিকে নিজের চোখে দেখে তারপর পল্লা ফেলে ধরার যে রোমাঞ্চ, তা এই উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

সাধারণত সন্ধ্যার পর যখন রাতের অন্ধকার বিলের বুকে নেমে আসে, তখনই শুরু হয় পল্লা উৎসব। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই মাছ ধরার পালা। রাতের নিস্তব্ধতা আর আলোর ঝলকানি মিলে এক অসাধারণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা মৎস্য শিকারিদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

পল্লা উৎসব কেবল মাছ ধরার একটি কৌশল নয়, এটি একটি সামাজিক মিলনমেলাও বটে। শিকারিরা দলবদ্ধভাবে মাছ খুঁজতে বের হন, একে অপরের সাথে গল্প করেন, হাসি-ঠাট্টা করেন এবং এই অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি উপভোগ করেন। মাছ ধরার পাশাপাশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি স্থানীয় মানুষের জীবনে একঘেয়েমি দূর করে এবং তাদের মধ্যে সজীবতা ফিরিয়ে আনে।

চলনবিলে মাছ ধরার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো 'বাউত উৎসব'। এই উৎসবে পল্লা ব্যবহারের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী উপকরণ, যেমন - জাল, পলো, চাঁই ইত্যাদি ব্যবহার করে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরা হয়। এটিও চলনবিলের মৎস্যজীবী সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই ধরনের উৎসবগুলি মূলত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রচলিত। এই অঞ্চলগুলির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় হিসেবে মাছ ধরার গুরুত্বের কারণে এই উৎসবগুলি স্থানীয় সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।

চলনবিলের 'পল্লা উৎসব' গ্রামীণ বাংলার এক বর্ণিল প্রতিচ্ছবি। এটি শুধুমাত্র মাছ ধরার একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি নয়, বরং এটি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, আনন্দ-উল্লাস এবং সম্প্রদায়ের বন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক ঐতিহ্যবাহী প্রথা বিলুপ্তির পথে হলেও, চলনবিলের 'পল্লা উৎসব' আজও তার স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলনবিলের মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে এবং তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখছে।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়