পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর মুছে ফেলা হলো কিমের উপস্থিতির সব চিহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। || বিএমএফ টেলিভিশন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বেইজিংয়ে বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল ও গ্লাস সতর্কভাবে পরিষ্কার করে দেন তার নিরাপত্তাকর্মীরা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বেইজিংয়ে বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল ও গ্লাস সতর্কভাবে পরিষ্কার করে দেন তার নিরাপত্তাকর্মীরা।
বুধবার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠক শেষে দুই উত্তর কোরীয় কর্মকর্তা যত্নসহকারে কিমের ব্যবহৃত চেয়ার পুরো মুছে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। পাশে থাকা কফি টেবিলও পরিষ্কার করা হয়।
কিম যে গ্লাসে পানি পান করেছিলেন সেটিও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়।
ক্রেমলিনের সাংবাদিক আলেক্সান্ডার ইউনাশেভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘বৈঠক শেষে উত্তর কোরীয় কর্মীরা কিমের উপস্থিতির সব চিহ্ন মুছে ফেলেন।’
কিম ও পুতিন ওই কক্ষে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় আলোচনা করেন। বৈঠকের পর তারা একসঙ্গে চা পান করেন। এরপর উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে একে অপরকে বিদায় জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি গোয়েন্দাদের হাত থেকে কিমের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্য ফাঁস না হওয়ার জন্যই এ ধরনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিমের দলের এই সতর্কতা আগে আরো বেশ কয়েকবার নজরে এসেছে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠকের আগে কিমের নিরাপত্তারক্ষীরা তার বসার চেয়ার ও টেবিল জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করে মুছে দেন। ২০২৩ সালে পুতিনের সঙ্গে আরেক বৈঠকের আগে তার দেহরক্ষীরা কিমের চেয়ার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেন এবং ধাতব ডিটেক্টর দিয়ে চেয়ার স্ক্যান করে নিশ্চিত হন যে সেটি নিরাপদ।
চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও নর্থ কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনসহ অন্তত দুই ডজন বিশ্বনেতার সামনে নিজেরদের অস্ত্র ভাণ্ডার প্রদর্শন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন শি চিন পিংয়ের দুই পাশে দাঁড়ান, যা পশ্চিমবিরোধী অবস্থান জোরালো করতে শি ও তার মিত্রদের সপ্তাহব্যাপী কূটনৈতিক প্রদর্শনের চূড়ান্ত মুহূর্ত ছিল। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের লাল গালিচা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার বিরল একটি দৃশ্যে শি দুজনের সঙ্গে হাত মেলান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার ডান পাশে ছিলেন পুতিন, বাম পাশে কিম। সেখানেই কিম ও পুতিন একটি কক্ষে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় আলোচনা করেন।
বেইজিংয়ে ‘ভিক্টরি ডে’ সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সাঁজোয়া ট্রেনে চীনে গিয়েছিলেন। এই ট্রেনে ভ্রমণের ঐতিহ্য শুরু করেন কিমের দাদা কিম ইল সুং। তিনি ভিয়েতনাম ও পূর্ব ইউরোপ সফরে ট্রেন ব্যবহার করতেন। কিমের বাবা কিম জং ইলও উড়োজাহাজে ভয় পেতেন বলে ট্রেনেই ভ্রমণ করতেন।
জাপানের নিক্কেই পত্রিকা জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কিম এবারও তার সাঁজোয়া ট্রেনে নিজস্ব টয়লেট সঙ্গে করে এনেছিলেন। এর কারণ হলো, তার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো তথ্য যেনো বাইরে ফাঁস না হয়। এই প্রথা কিমের বাবা ও পূর্বসূরি কিম জং ইলের আমল থেকেই চলে আসছে।
মার্কিনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টার-এর উত্তর কোরিয়া নেতৃত্ব বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাডেন বলেন, ‘বিশেষ টয়লেট ও আবর্জনা ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। যাতে কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি মিত্র দেশও, তার বর্জ্য বা সিগারেটের টুকরো সংগ্রহ করে পরীক্ষার সুযোগ না পায়। এতে কিম জং উনের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি চুল বা ত্বকের অবস্থা সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যেতে পারে।’
এর আগে ২০১৯ সালে হ্যানয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর কিমের দেহরক্ষীদেরকে হোটেল কক্ষের মেঝে ঢেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিষ্কার করতে দেখা গিয়েছিল। তারা কক্ষ থেকে এমনকি বিছানার গদি পর্যন্ত সরিয়ে ফেলেছিলেন।
সূত্র : রয়টার্স