বিমানবন্দরে জেনারেটর দুর্নীতি: ঝুলে যাচ্ছে মামলার বিচার প্রক্রিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন
কক্সবাজার বিমানবন্দরে জেনারেটর সরবরাহ নিয়ে করা প্রায় ৬০ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা বর্তমানে ঝুলিয়ে দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া অকার্যকর করার এবং আসামিদের পুরো পেনশন হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ ও ভবেশ চন্দ্র রায় এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শাহাবুদ্দিন মিলেমিশে এই অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে জেনারেটর সরবরাহ নিয়ে করা প্রায় ৬০ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা বর্তমানে ঝুলিয়ে দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া অকার্যকর করার এবং আসামিদের পুরো পেনশন হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ ও ভবেশ চন্দ্র রায় এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শাহাবুদ্দিন মিলেমিশে এই অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পারস্পরিক যোগসাজশে আসামিরা বারবার ধার্য তারিখে আদালতে গরহাজির থাকছেন, ফলে মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর—দু'টি তারিখেই আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মাহবুবুল হকও নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত থাকছেন। জানা গেছে, আইও মাহবুবুল হক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত আছেন। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বেবিচকের বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, মামলার আসামি দুই বেবিচক প্রকৌশলীর মূল উদ্দেশ্য হলো পুরো পেনশন হাতিয়ে নিয়ে পিআরএলে চলে যাওয়া। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রায় ইতোমধ্যে পুরো পেনশন নিয়ে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) চলে যাওয়ায় এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। অপর আসামি প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজও একই পথে হাঁটছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি জেনারেটর সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। সর্বনিম্ন ৯০ লাখ টাকা দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পান ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শাহাবুদ্দিন।
জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে জেনারেটর সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও, ঠিকাদার শাহাবুদ্দিন জেনারেটর সরবরাহ না করেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ৬০ লাখ টাকা বিল তুলে নেন। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে দুদক এবং মামলাটি নথিভুক্ত করে।
দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধানের পর দুদক ২০২৩ সালে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। শুরু হয় বিচার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গঠন করা হয় চার্জ। এই চার্জের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরের সাবেক ব্যবস্থাপক হাসান জহির উচ্চ আদালতে রিভিউ মামলা দায়ের করেন। শুনানির পর উচ্চ আদালত মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর প্রথম ছয় মাস, এরপর আরও ছয় মাস এবং সবশেষে এক বছর স্থগিতাদেশ দেন।
কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, মামলা বিচারাধীন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হওয়ার পরেও বেবিচক অভিযুক্ত কর্মকর্তা—সাবেক ব্যবস্থাপক হাসান জহির, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ, নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ দে এবং সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্রের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলে নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে পদায়ন করে। এমনকি সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্রকে শতভাগ পেনশন নিয়ে পিআরএলে যাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়।
এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাঁদ দে আরেক হাস্যরসাত্মক ঘটনার জন্ম দেন। তিনি সবার সাসপেনশন চ্যালেঞ্জ করে বেবিচকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার ফলে তাদের বেতন-ভাতা আটকে যেতে বসে। ঠিক তখনই মিহির মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
বেবিচক সূত্র বলছে, এসব পদক্ষেপের ফলস্বরূপই হয়তো গড়পড়তা অভিযুক্ত সব কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলে নেয় কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে, দুদকের মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও সহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রায় পিআরএলে চলে যান। তিনি সাধারণত প্রাপ্য ৮০ ভাগ পেনশন দেওয়ার আবেদন করলেও, বেবিচক আগ বাড়িয়ে তাঁকে শতভাগ পেনশন মঞ্জুর করে দেয়। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় শতভাগ পেনশন মঞ্জুরের এই ঘটনা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে।