ডিজিটাল যুগে সম্পর্কের পরিবর্তন
বিএমএফ টেলিভিশন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
আজকের পৃথিবী নিছক সময় আর দূরত্বের হিসাবের মধ্যে আবদ্ধ নয়। আমরা এমন এক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে একটি স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ আমাদের পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও কল, অনলাইন কমিউনিটি—সবকিছুই যেন মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই কাছাকাছি আসাটা কি সত্যিই সম্পর্ককে গভীর করছে, নাকি কেবলই বাহ্যিক এক জগত তৈরি করছে?
আজকের পৃথিবী নিছক সময় আর দূরত্বের হিসাবের মধ্যে আবদ্ধ নয়। আমরা এমন এক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে একটি স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ আমাদের পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও কল, অনলাইন কমিউনিটি—সবকিছুই যেন মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই কাছাকাছি আসাটা কি সত্যিই সম্পর্ককে গভীর করছে, নাকি কেবলই বাহ্যিক এক জগত তৈরি করছে?
সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা
ডিজিটাল যুগে সম্পর্ক মানেই আর কেবল পারিবারিক আড্ডা, প্রতিবেশী মেলামেশা বা চিঠির অপেক্ষা নয়। এখন সম্পর্কের বড় অংশ গড়ে ওঠে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ—এসবের মাধ্যমেই তৈরি হয় নতুন পরিচয়, নতুন বন্ধুত্ব, এমনকি ভালোবাসার সম্পর্কও। এক ক্লিকেই মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কারও সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে।
ইতিবাচক দিক
ডিজিটাল যুগ সম্পর্ককে দিয়েছে অসংখ্য সম্ভাবনা।
দূরে থাকা পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা সম্ভব হচ্ছে।
দীর্ঘ দূরত্বের প্রেম কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কও সহজ হচ্ছে।
একাকীত্ব কমছে, কারণ মানুষ যেকোনো সময় অনলাইনে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছে।
সামাজিক আন্দোলন, দাতব্য কার্যক্রম, কিংবা শিক্ষা—সবখানেই ভার্চুয়াল সম্পর্কের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
নেতিবাচক দিক
তবে এর পাশাপাশি এসেছে কিছু জটিলতা।
মানুষ এখন বাস্তবের চেয়ে ভার্চুয়াল সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অনবরত পোস্ট, লাইক-কমেন্টের মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা মাপা হচ্ছে, অথচ বাস্তব জীবনে দূরত্ব বাড়ছে।
অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে ভুল বোঝাবুঝি, নিরাপত্তাহীনতা, এমনকি মানসিক চাপও তৈরি হচ্ছে।
অনলাইনের ভুয়া তথ্য বা ভুয়া পরিচয়ের কারণে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে।
প্রজন্মের প্রভাব
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল সম্পর্কের প্রতি সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট। অনেকেই তাদের প্রকৃত অনুভূতির জায়গা প্রকাশ করছে কেবল ভার্চুয়াল মাধ্যমে। আবার কেউ কেউ বাস্তব জীবনের কাছের মানুষকে উপেক্ষা করে অচেনা অনলাইন বন্ধুদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে বাস্তব সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।
সমাধান ও করণীয়
ডিজিটাল সম্পর্ককে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভার্চুয়াল সম্পর্কের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের সম্পর্ককে সময় দিতে হবে।
পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, প্রতিবেশীর খোঁজ নেওয়া—এসব অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
অনলাইনে যেকোনো সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে তার সত্যতা যাচাই করা জরুরি।
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে তারা কেবল ভার্চুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ না থাকে।
উপসংহার
ডিজিটাল যুগ আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে—এটা সত্য। তবে সম্পর্ক কেবল প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে না; সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাস, বোঝাপড়া আর হৃদয়ের বন্ধনে। যদি আমরা ডিজিটাল যোগাযোগকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি, তবে এটি আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে। আর যদি ভারসাম্য হারাই, তবে এই প্রযুক্তিই হয়ে উঠবে দূরত্বের কারণ।
লেখক: শিরিন আকতার
স্বত্বাধিকারী : উড়ান
সিইও : টেস্টি বেকার্স