ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৩১, রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চীন বলেছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনির পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতিকে তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। সেই সঙ্গে তারা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকারকেও সম্মান জানায়।

চীন বলেছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনির পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতিকে তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। সেই সঙ্গে তারা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকারকেও সম্মান জানায়।

শুক্রবার (৫ জুলাই) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফরাসি প্রতিপক্ষ জ্যঁ-নোয়েল ব্যারোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

তিনি বলেন, ‘আয়াতুল্লাহ খামেনি একাধিকবার স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি, সংরক্ষণ বা ব্যবহারকে নৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই মর্মে তিনি একটি ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা, বিশেষ করে ইসরায়েল, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে ইরান তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে; যদিও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে গভীর তদন্ত সত্ত্বেও এ ধরনের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।’

ওয়াং আরও তীব্রভাবে নিন্দা জানান ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক যুদ্ধের, যা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।

এই আগ্রাসনে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়, যাতে কমপক্ষে ৯৩৫ জন নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা। পরমাণু বিজ্ঞানীদের তাদের বাসভবনেই লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়।

১২ দিনের সংঘর্ষ শেষে ইরানের পাল্টা আক্রমণের চাপে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আবেদন করে। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে ইসরায়েলের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রও সংঘাতে অংশ নেয় এবং ইরানের কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়।

আইএইএ-এর বোর্ড অব গভর্নরসের সাম্প্রতিক ইরানবিরোধী প্রস্তাবকেই এই আগ্রাসনের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তারা।

ওয়াং বলেন, ইসরায়েলের এই হামলার ‘কোনো বৈধতা নেই’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘দায়িত্বহীন’ বোমাবর্ষণ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর হামলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি কোনো পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে, তাহলে পুরো বিশ্বকেই এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক আরও বলেন, ‘বেইজিং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকারকে সম্মান জানায়। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর সদস্য, ফলে এই অধিকার তার রয়েছে।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সুযোগগুলো বিশ্ব সম্প্রদায় যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ওয়াং বলেন, ‘বিশ্ব শান্তির দরজায় কড়া নাড়লেও, শেষ পর্যন্ত সে দরজা খোলা যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি বিশ্ব সে সময় সঠিক পদক্ষেপ নিত, তাহলে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুটি আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানের একটি রোল মডেল হতে পারতো।’

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ ইরানের পারমাণবিক সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, বরং বলপ্রয়োগের অপব্যবহার কেবল সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং বিদ্বেষকে গভীর করবে।’

তিনি বলেন, ‘যদি শক্তিকে ভালো-মন্দ বিচার করার একমাত্র মানদণ্ড বানানো হয়, তবে নিয়ম ও ন্যায়বিচার কোথায় দাঁড়াবে? প্রকৃত শান্তি শুধুমাত্র শক্তির মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে না— এটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতে পারে।’

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়