শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ঘিরে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিএমএফ টেলিভিশন
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) দীর্ঘদিন ধরে একটি সংগঠিত দুর্নীতি–চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে—এমন অভিযোগ তুলছেন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার। তাঁদের দাবি, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বদলি–বাণিজ্য, ঘুষ আদায়, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
বদলি–বাণিজ্য ও টেন্ডার সিন্ডিকেট
সূত্রের অভিযোগ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইইডির এক নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী দীর্ঘদিন ধরে এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় আছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, পূর্ববর্তী চারজন প্রধান প্রকৌশলীই সিন্ডিকেটের চাপের কারণে স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এমনকি সাম্প্রতিক তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলির আদেশও সিন্ডিকেটের ‘নির্দেশ’ না পেয়ে বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতে নাকি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও লাভজনক প্রকল্পে পোস্টিং পেতে ‘নির্ধারিত অর্থ’ দিতে হতো—এমন তালিকাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানান কিছু কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রামে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ
কুড়িগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ৫ শতাংশ বাধ্যতামূলক ঘুষ, ১ শতাংশ কমিশন এবং টেন্ডার কেনাবেচার অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারদের দাবি—একটি আসবাবপত্র প্রকল্পে আহ্বানকৃত ৩৯টি দরপত্রের মধ্যে ২৬টি এককভাবে একটি মনোনীত ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছিল।
কিছু ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের ওপর দলীয় ক্যাডার বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হতো।
অভ্যন্তরীণ ঘুষ সংগ্রহ
ইইডির কয়েকজন কর্মচারীর দাবি—হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারীসহ কিছু কর্মচারীর মাধ্যমে নিয়মিত ঘুষ সংগ্রহের একটি ‘চেইন’ চালু ছিল। সৎ বা ঘুষ–প্রত্যাখ্যানকারী উপ–সহকারী প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিত করা হতো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া অবৈধ আর্থিক লেনদেন থেকে সংগৃহীত অর্থে রংপুরে ক্লিনিক ব্যবসা, ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং গ্রামে জমি কেনার অভিযোগ উঠেছে—যদিও এসব অভিযোগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
ব্যক্তিগত সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ
ইইডির ভেতরের কিছু কর্মকর্তা দাবি করেন, ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের প্রভাব ধরে রাখতে ব্যক্তিগত সুবিধা দেওয়ার চেষ্টাও করা হতো। অভিযোগ রয়েছে—সচিবালয়ের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন’ বা নারী–সম্পৃক্ত অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। একই সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরা ইইডির অফিসিয়াল গাড়ি নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
বক্তব্য ও সতর্কতা
অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররাও কথা বলতে অনীহা জানান।
রংপুর বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন—
“কেউ অনিয়ম করে থাকলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।”
তদন্তের দাবি
ইইডির সৎ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও কর্মচারীদের দাবি—অভিযোগগুলো সত্য হলে তা শুধু দুর্নীতি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শামিল। তাঁরা দ্রুত স্বাধীন তদন্ত, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।