আদানির বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকিতে কতটা ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশ?

ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:২৪, বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের আদানি গ্রুপ বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের আদানি গ্রুপ বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

৩ কোটি ডলার বা ৩৬৬ কোটি টাকার (এক ডলার সমান ১২২ টাকা) বিল পাওয়ার পর আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। সোমবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ৮৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি। তবে আদানির মুখপাত্র যুগান্তরকে বলেছেন, পিডিবির কাছে এখন আদানির স্বাভাবিক বিল (বিরোধপূর্ণ নয়) সুদসহ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (৩৫ কোটি ডলার) পাওনা আছে। এর আগে ৩০ অক্টোবর আদানি বলেছিল-বিরোধপূর্ণ বিল ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, একটা সমাধান আপাতত হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। এর বেশি কোনো মন্তব্য করা যাবে না। এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কেন যেন অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছে। তবে এ ব্যাপারে আইনগত মতামতও নেওয়া হচ্ছে।

৩০ অক্টোবর এক চিঠিতে আদানি পাওয়ার জানায়, ১০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার না দিলে ১১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এ সময়ে বাংলাদেশকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এই চিঠির পর বাংলাদেশ সরকার নড়েচড়ে বসে। বিদ্যুৎ বিভাগ দফায় দফায় বৈঠক করে। আদানিকে কড়া চিঠি দিয়ে বলা হয়-হুট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার যুগান্তরকে আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র জানান, পিডিবির সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত মেনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় আদানি। এজন্য পিডিবিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বকেয়া বিল পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা যায়।

জানা গেছে, আদানি কারসাজির মাধ্যমে বিরোধপূর্ণ বিল নিচ্ছে। পিডিবির হিসাবে কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম টনপ্রতি ৬৫ ডলার। তবে আদানি ধরছে ৮০ ডলার। নিয়মিতভাবে দুপক্ষের হিসাবে ১৫ থেকে ২০ ডলারের ফারাক থাকছে। আর এ বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই পুরো বিল চাইছে আদানি।

পিডিবি জানায়, শীত মওসুমে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমেছে। গরমের দিনে দুপুরে লাগত ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আদানি সীমান্তের ওপার থেকে অর্থাৎ গড্ডা থেকে পাঠিয়েছে ৮৩৬ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ অনেকটা আদানির বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কারণ কোম্পানিটি ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এটি বন্ধ হলে দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সরবরাহ দিতে পারবে। তবে এজন্য ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু করতে হবে। এর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২৬ টাকার বেশি। অথচ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিট খরচ পড়ে ১৩ টাকা।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বলে আসছে-বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন চুক্তি ও বিল পরিশোধ করার ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরমধ্যে কয়লার বাড়তি দাম নিয়ে আদানির সঙ্গে পিডিবির বিরোধ বাধে এবং এ পর্যন্ত ২৩৪ মিলিয়ন ডলার বিরোধপূর্ণ বিল হিসাবে গণ্য হয়ে আছে। এ বিল নিয়ে তিন মাস আগে একেবারে সবার অগোচরে আদানির মালিক গৌতম আদানি বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজের সঙ্গে দেখা করে তিনি সব টাকা ছাড় করার কথা বলেন। নতুবা বিষয়টি চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি।

দেশীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকির পর আদানিকে ৩ কোটি ডলার দেওয়া হলো। অথচ পিডিবির কাছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর ৫-৬ মাসের বিল বছরের পর বছর বকেয়া পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এ বকেয়া বিল ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়