পুরনো ছবির ‘পুনর্মুক্তি’ খুলতে পারে নতুন দুয়ার

বিনোদন ডেস্ক। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৫২, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

পুরনো ছবির পুনর্মুক্তি চলচ্চিত্র দুনিয়ায় নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দেশেই এই রীতির প্রচলন আছে। বিশেষ করে হলিউড ও বলিউডে পুনর্মুক্তির ঘটনা নিয়মিতই। গত বছর তো রীতিমতো পুনর্মুক্তির হিড়িক পড়ে গিয়েছিল ভারতে।

পুরনো ছবির পুনর্মুক্তি চলচ্চিত্র দুনিয়ায় নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দেশেই এই রীতির প্রচলন আছে। বিশেষ করে হলিউড ও বলিউডে পুনর্মুক্তির ঘটনা নিয়মিতই। গত বছর তো রীতিমতো পুনর্মুক্তির হিড়িক পড়ে গিয়েছিল ভারতে।


একের পর এক পুরনো ছবি মুক্তি পেয়েছে, হয়েছে সফলও। এমনকি কিছু ছবি প্রথম মুক্তির চেয়েও বেশি আয়ের রেকর্ড গড়েছে। যার ফলে বলিউড নির্মাতা-প্রযোজকদের সামনে আয়ের নতুন দুয়ার খুলে গেছে।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় হিন্দি ‘তুম্বাড়’, খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি ছবিটি।


কিন্তু টিভি ও অন্তর্জালে আসার পর এটি ‘ক্লাসিক’ তকমা পায়। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর পুনর্মুত্তির পর প্রেক্ষাগৃহে ঝড় তোলে এ ছবি। প্রথম মুক্তিতে আয় ছিল মোটে ১৫ কোটি, পুনর্মুক্তিতে এটি আয় করেছে ৩৮ কোটি রুপিরও বেশি। একই ঘটনা ঘটে রোম্যান্টিক ড্রামা ‘লায়লা মজনু’ [২০১৮]-এর ক্ষেত্রেও।


প্রথম মুক্তিতে ছবিটি বক্স অফিসে মাত্র দুই কোটি রুপি আয় করেছিল! গত বছর মুক্তির পর এটি ১০ কোটি রুপির বেশি আয় করে। এ রকম উদাহরণ অনেক। পুনর্মুক্তিতে চমকে দেওয়া ছবিগুলোর মধ্যে আরো আছে যশরাজ চোপড়ার ‘বীর-জারা’ [৪ কোটি রুপি], ইমতিয়াজ আলীর ‘রকস্টার’ [ছয় কোটি ৫০ লাখ রুপি], গৌতম বাসুদেব মেননের ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’ [তিন কোটি ২৫ লাখ রুপি] ইত্যাদি।
আমেরিকায় পুনর্মুক্তির প্রচলন অনেক আগে থেকে। ১৯৯১ সালের ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ পুনরায় মুক্তি দেওয়া হয় ২০১২ সালে।


পুনর্মুক্তিতে ছবিটি ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল। স্টার ওয়ারস সিরিজের ‘স্টার ওয়ারস : দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালে। ১৭ বছর পর পুনর্মুক্তিতে ছবিটি আয় করে সাত কোটি ৮০ লাখ ডলার। ‘জুরাসিক পার্ক’ [১৯৯৩] কার না পছন্দের? ২০১৩ সালে এটিও পুনর্মুক্তি পায়, আর আয় করে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অ্যানিমেশন জগতে ‘লায়ন কিং’-এর দাপট সবারই জানা। ১৯৯৪ সালের এ ছবি ২০১১-তে ফের প্রেক্ষাগৃহে এসে আয় করে ১৫ কোটি ডলার। জেমস ক্যামেরনের আইকনিক ছবি ‘টাইটানিক’ [১৯৯৭] বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তুলেছিল। ২০১২ সালে পুনর্মুক্তি পেয়ে এটি আয় করে ৩৫ কোটি ডলার।

‘আম্মাজান’ [১৯৯৯]—মান্না-শবনম অভিনীত ছবিটির পোস্টার বাংলাদেশের কি এমন ছবি নেই, যেগুলোর প্রতি দর্শকের উন্মাদনা মাত্রা ছাড়িয়েছিল? আছে তো বটে। কিন্তু সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় দর্শকের সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কখনো। রোজার মাসে বা অফ সিজনে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে নীরবে অনেক পুরনো ছবি চালানো হয়। কিন্তু ডাকঢোল পিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্মুক্তি দিলে সেসব ছবির আবেদন বাড়তে পারে।


তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ [১৯৮৯] ঢালিউডের মাইলফলক ছবি। একইভাবে সালমান শাহ অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ [১৯৯৫], ‘তোমাকে চাই’ [১৯৯৬] কিংবা ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ [১৯৯৬] এবং মান্না অভিনীত ‘আম্মাজান’ [১৯৯৯], ‘দাঙ্গা’ [১৯৯২] ছবির কথাও মনে আছে অনেক দর্শকের। আজিজুর রহমানের ‘ছুটির ঘণ্টা’ [১৯৮০], মতিউর রহমান পানুর ‘মনের মাঝে তুমি’ [২০০৩], সালাউদ্দিন লাভলুর ‘মোল্লা বাড়ির বউ’ [২০০৫], গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ [২০০৯], শাকিব খান অভিনীত ‘শিকারী’ [২০১৬]—এমন বহু ছবি আছে, যেগুলো এখনো দর্শকের প্রিয়। এসব ছবির প্রিন্ট ও সাউন্ড সংস্কার করে পুনর্মুক্তি দিলে দর্শক নতুনভাবে ছবিগুলো দেখার সুযোগ পাবে। সেই সঙ্গে নতুন ছবির সংকটের দিনেও প্রেক্ষাগৃহগুলো থাকবে সচল।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের কথা ট্রাই করা যেতে পারে ||

 গিয়াস উদ্দিন সেলিম,  নির্মাতা কখনো পুনর্মুক্তি দিয়ে দেখিনি, তাই আসলে বুঝতেও পারছি না ব্যাপারটা কেমন হবে, দর্শক কতখানি গ্রহণ করবে। তবে হ্যাঁ, এটা ট্রাই করা যেতে পারে। যেহেতু ঈদের বাইরে ছবির একটা সংকট থাকে, সে সময়ে এই সুযোগ নেওয়া যেতে পারে। এখন বিষয় হলো, আমি তো নির্মাতা; ছবি বানাই। মুক্তি বা পুনর্মুক্তির বিষয়গুলো ভালো বুঝবেন ডিস্ট্রিবিউটররা। তাঁদের প্রতি আহ্বান থাকবে এ বিষয়টা বিবেচনা করার।
প্রস্তাবটা ভালো কিন্তু... || মিয়া আলাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি
প্রস্তাবটা ভালো। কিন্তু আমাদের দর্শক খুশি হবে না। আগের মতো চলচ্চিত্রের আবেদনটা নেই। বড় পর্দায় ছবি দেখার যে আমেজ ছিল, সেটাও নেই। অনেক ছবি ইউটিউবে পাওয়া যায়, ঘরে বসে সবাই দেখে। আমিও আগের দিনের কিছু ছবি দেখেছি ইউটিউবে, যদিও তৃপ্তিটা পাইনি। কারণ ছবিগুলোর প্রিন্ট, সাউন্ড এখনকার মতো উন্নত নয়। এখন আমাদের ছবি হয়ে গেছে ঈদনির্ভর। ঈদ ছাড়া ছবি দেখছে না কেউ। আবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির বড় প্রভাব পড়ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষ ছবি দেখতে আসেন। এসব সংকট নিয়ে আমরা ২৬ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি।


ছবি এখন হয়ে গেছ ঈদ আর হুজুগকেন্দ্রিক || জাহিদ হাসান অভি, প্রযোজক-পরিবেশক আমাদের এখানে আনঅফিশিয়ালি রিলিজ কিন্তু হয়। সালমান শাহ, মান্না, শাকিব খান—অনেকের ছবিই বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মাঝেমধ্যে প্রদর্শিত হয়। তবে হ্যাঁ, ভারত বা আমেরিকার মতো ঘটা করে রিলিজ হয় না। আসলে আমাদের এখানে মূল প্রযোজকরা ছবিগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই তৃতীয় পক্ষ আবার ছবিগুলো নিয়ে খুব একটা আন্তরিক থাকেন না, তাঁদের মধ্যে ছবিগুলো নিয়ে ইমোশনটা কাজ করে না। ফলে আয়োজন করে পুনর্মুক্তির কথাও ভাবেন না। তবে আমার ধারণা একসময় এমনটা হবে, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’, ‘আয়নাবাজি’র মতো ছবিগুলো অফিশিয়ালি পুনরায় মুক্তি পাবে। যেমন গত বছর ভালোবাসা দিবসে স্টার সিনেপ্লক্স রোম্যান্টিক ছবিগুলো চালিয়েছে, মোটামুটি প্রচারণাও করেছিল। তো এ রকম সামনে আরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা যেসব ছবি প্রযোজনা বা পরিবেশনা করেছি, সেগুলো প্রায়ই বিভিন্ন হলে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু প্রচারণায় বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করি না; তারও কারণ আছে। দেখুন, এখন বাংলাদেশের ছবি হয়ে গেছে ঈদকেন্দ্রিক ও হুজুগকেন্দ্রিক। ঈদ আর হুজুগ ছাড়া ছবি দেখে না মানুষ। যেখানে নতুন ছবি দেখতেই দর্শক সেভাবে আসে না, পুরনো ছবিতে কি দর্শক হবে! সুতরাং নতুন পোস্টার, প্রচারণা কিংবা সংস্কারে যে অতিরিক্ত অর্থব্যয় করব, তা তো উঠে আসবে না। এসব ভেবেই আসলে ঘটা করে মুক্তির বিষয়টা আমলে নিতে পারি না।


ছবি পুনর্মুক্তির ভাবনাটা সুন্দর || খোরশেদ আলম খসরু, প্রযোজক পুনর্মুক্তির সুযোগটা কাজে লাগানো অবশ্যই সম্ভব। দেখুন, আমাদের ছবির একটা সোনালি অতীত আছে। প্রতি সপ্তাহে ছবি মুক্তি পেত, অধিকাংশ ছবিই সফল হতো। কিন্তু স্যাটেলাইট টিভি এসে আমরা প্রথম ধাক্কা খেলাম, এরপর পাইরেসি ধ্বংস করে দিলো। তা ছাড়া সময়ের সঙ্গে হলগুলোর জায়গার দাম বেড়ে গেল। হলগুলোকে কেন্দ্র করে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। ফলে ক্রমে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। পুনর্মুক্তির ভাবনাটা সুন্দর। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, করপোরেট সেক্টরকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বিভিন্ন বড় বড় কম্পানি তাদের প্রচারণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। সেখান থেকে কিছু অংশ তারা চলচ্চিত্রের জন্য রাখতে পারে। ধরুন কোনো কম্পানি এক সপ্তাহের জন্য একটি ছবি চালাবে, হলের টিকিটগুলো কিনে নেবে, দর্শককে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে দেখাবে। এতে তাদের প্রচারণা যেমন হবে, তেমনি সিনেমা হলেও দর্শক সমাগম অব্যাহত থাকবে। তবে হ্যাঁ, করপোরেট সেক্টরকে বিষয়টা বোঝাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রির সচেতনরা এগিয়ে আসতে পারেন, সরকারও যদি একটু সুনজর দেয়, তাহলেই সম্ভব। শুধু প্রযোজকের ভরসায় আর কত। তারা তো লোকসান গুনতে গুনতে অসহায়। আমরা যারা এখনো চলচ্চিত্রকে আঁকড়ে আছি, স্রেফ ভালোবাসা থেকে।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়