বাঘায় চালকুমড়ার বড়ি বানাতে গ্রামীণ বধূদের ব্যস্ততা
আবুল হাশেম রাজশাহী ব্যুরোঃ || বিএমএফ টেলিভিশন
শীতের আগমনী বার্তা বাজতেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামবাংলার এক চিরচেনা ঐতিহ্যের রঙ। সেই ঐতিহ্য—চালকুমড়ার বড়ি তৈরি। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন চলছে যেন উৎসবের আমেজ। বয়স্ক নারীদের পাশাপাশি তরুণী বধূরাও এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনদের উপহার, এমনকি আয়ের উৎস হিসেবেও বড়ির কদর বছরজুড়েই থাকে।
শীতের আগমনী বার্তা বাজতেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামবাংলার এক চিরচেনা ঐতিহ্যের রঙ। সেই ঐতিহ্য—চালকুমড়ার বড়ি তৈরি। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন চলছে যেন উৎসবের আমেজ। বয়স্ক নারীদের পাশাপাশি তরুণী বধূরাও এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনদের উপহার, এমনকি আয়ের উৎস হিসেবেও বড়ির কদর বছরজুড়েই থাকে।
স্থানীয়দের মতে, শীতের সবজিতে চালকুমড়ার বড়ির ব্যবহার কখনোই কমেনি। পুরনো দিনের সেই স্বাদ ও গন্ধ আজও অটুট। আর তাই শীত আসলেই পুরো গ্রামে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। বাঘার বিভিন্ন গ্রামে সকালবেলা থেকেই দেখা যায় নারীরা একসঙ্গে বড়ি বানানোর কাজে লেগে যাচ্ছেন। কেউ চালকুমড়া ঘষছেন, কেউ কলাই বাটা তৈরি করছেন, আবার কেউ রোদে শুকানোর জন্য সুন্দর আকারে বড়ি সাজাচ্ছেন—সব মিলিয়ে যেন এক অনন্য কারুকার্যের চিত্র।
জানা যায়, শ্রাবণ–ভাদ্র মাসে উপজেলার কৃষকরা মাসকলাইয়ের আবাদ করে থাকেন। শীতের শুরুতেই সেই কলাই ঘরে ওঠে। এরপর চালকুমড়া ও মাসকলাই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করা হয়। পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা দলার ওপর ছোট ছোট আকৃতিতে সাজিয়ে দেওয়া হয় রোদে। দু–একদিন রোদে শুকালেই বড়িগুলো শক্ত হয়ে ওঠে এবং সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। এতে যেমন ঘরের স্বাদ বজায় থাকে, তেমনি শীতের সবজির তরকারিতে বড়ির স্বাদ এনে দেয় এক স্বর্গীয় স্পর্শ।
শহরে থাকা আত্মীয়স্বজনদের কাছেও এর চাহিদা সবসময়ই তুঙ্গে। শীত শুরু হতেই তারা গ্রামের বাড়িতে ফোন দিয়ে বড়ি পাঠানোর অনুরোধ করেন। ফলে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে এই সময় বড়ি বানানোর আয়োজন থাকে না। যেন প্রত্যেক ঘরেই চলছে একেকটি কর্মশালা।
স্থানীয় বড়ি ব্যবসায়ী নাদের আলী বলেন,
“বাজারে চালকুমড়ার বড়ির চাহিদা অনেক। আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর দামও ভালো। ব্যবসা করে মুনাফা হচ্ছে, তাই আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আগামী দিনে চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।”
এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বাঘার গ্রামবাংলায় চালকুমড়ার বড়ি শুধু খাবার নয়—এটি এক ঐতিহ্য, এক সুস্বাদু স্মৃতি, এবং গ্রামীণ নারীদের হাসিমুখের এক অনবদ্য শিল্প। শীত এলেই তাই বাঘার গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় চালকুমড়ার বড়ি তৈরির উৎসব, যা এখনও ধরে রেখেছে বাংলার গ্রামীণ জীবনের অম্লান সৌন্দর্য।