তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সুগম হবে গণতন্ত্রের পথ
ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনকে সামনে রেখে ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংবর্ধনা কমিটি’র আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ মুখোমুখি হয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনকে সামনে রেখে ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংবর্ধনা কমিটি’র আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ মুখোমুখি হয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-
সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংবর্ধনা কমিটি’র আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাধ্য হয়ে প্রবাসজীবন কাটানোর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সমগ্র দেশবাসী। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে আমরা দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। তাঁর প্রত্যাবর্তনে গণতন্ত্রের খুঁটিটা যেন মজবুত হয়, সেদিকে আমরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। তাঁর প্রত্যাবর্তনে দেশে গণতন্ত্রের পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি কোনো ব্যক্তিতান্ত্রিক বা দলতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রকে কখনো উৎসাহিত করে না। বরং তারেক রহমানের নেতৃত্বেই এ দেশে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ।
বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
প্রশ্ন : ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অভ্যর্থনা কমিটি’র (রিসিপশন কমিটি) আহ্বায়ক আপনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে কীভাবে বরণ করবেন?
সালাহউদ্দিন আহমদ : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির প্রস্তুতি সমাপ্ত হয়েছে। জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে (৩০০ ফিট সড়কে) সুদৃশ্য মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে আমাদের মেডিকেল টিম, রিসিপশন টিম, প্রচার এবং সিকিউরিটি টিমের কাজ সমন্বয় করা আছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে আসবেন, তবে রেলপথে যাঁরা আসবেন তাঁদের জন্য দলের পক্ষ থেকে কিছুটা সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে নেতাকে বরণ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। দেশবাসীর সঙ্গে আমি আনন্দের সঙ্গে বলব, ‘স্বাগত হে প্রিয় নেতা’।
প্রশ্ন : রাজধানীর পূর্বাচল রুটের ৩০০ ফিট রাস্তায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে আপনাদের জনসমাগমের প্রত্যাশা বা টার্গেট কেমন?
সালাহউদ্দিন আহমদ : আমরা ঢাকা মহানগরীর জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে অর্থাৎ পূর্বাচল ৩০০ ফিট রাস্তার চেয়ে বড় কোনো জায়গা খুঁজে পাইনি। আমাদের প্রত্যাশা- এটি হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে আমরা রাস্তার একপাশে সব আয়োজন করেছি। তিনি বিমানবন্দর থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। এ রাস্তা দিয়েই তাঁকে যেতে হয়। সরকারের অনুমতি নিয়ে সেখানে স্টেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে এ বিশাল আয়োজন দেখতে পায়, সেজন্য আমরা প্রচুর ডিজিটাল ও এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করছি।
প্রশ্ন : শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন কীভাবে? শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? পুলিশের কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?
সালাহউদ্দিন আহমদ : শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের একটি সিকিউরিটি টিম আছে। যার নেতৃত্বে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছেন। পুলিশের সদস্যসংখ্যা আগের তুলনায় দু-তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং সরকার এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) নামের একটি নিরাপত্তা দল আছে; যার প্রধান দায়িত্বে আছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম (শামস)। তাঁর নেতৃত্বে এই সিএসএফের সদস্যসংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যের সঙ্গে তিনিই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রত্যাবর্তন
প্রশ্ন : তারেক রহমান দেশে ফিরে কোথায় থাকবেন? গুলশানের সেই নতুন বাড়িতেই কি?
সালাহউদ্দিন আহমদ : হ্যাঁ, তিনি গুলশানের ‘ফিরোজা’ ভবনের পাশের বাড়িতে থাকবেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের পর এ বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি বাড়িটির মিউটেশন আপডেট করা হয়েছে। সেই মিউটেশনের কপি গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসায় গিয়ে দেখা করে দিয়ে এসেছেন। তবে এ বাড়ির মালিকানা আগেই ছিল। আগে এটি ভাড়া দেওয়া থাকলেও এখন সংস্কার করা হয়েছে এবং সেখানেই তিনি থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন, নাকি মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন? তাঁকে অভ্যর্থনাই বা কখন দেওয়া হবে?
সালাহউদ্দিন আহমদ : তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। যাওয়ার পথে রাস্তার মাঝখানে জনগণের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফিরতে পারার জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাবেন এবং জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। এ ছাড়া আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর ভাবনা সংক্ষেপে শেয়ার করবেন। এটি হবে তাঁর একটি ঐতিহাসিক পদার্পণ। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে।
প্রশ্ন : এর পরে কি তিনি ঢাকার বাইরে সফর করবেন? আর নির্বাচন নিয়ে যে ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে, তা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
সালাহউদ্দিন আহমদ : ঢাকার বাইরে যাওয়ার বিষয়টি পরবর্তী প্রোগ্রামের অংশ, তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অবশ্যই যাবেন। আর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বলতে হয়, ফ্যাসিবাদী শক্তি সক্রিয় আছে; যাতে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজ না হয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি কোনো অপকৌশল আমাদের এই উত্তরণ এবং আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সরকার ও জনগণকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
প্রশ্ন : বিএনপির ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান বাস্তবায়নের জন্য আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়াটা কতটা জরুরি?
সালাহউদ্দিন আহমদ : আমরা আমাদের ৩১ দফা সংস্কারের শুরুতেই বলেছি, যদি জনগণের ভোটে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই, তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে একটি ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠন করব। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংস্কার ও অন্যান্য পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন আমরা ক্ষমতায় আসব। তখনই ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি কার্যকর হবে।
প্রশ্ন : যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি কি সমাধান হয়েছে?
সালাহউদ্দিন আহমদ : সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মোটামুটি একটা সমাধান হয়ে গেছে।
প্রশ্ন : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব প্রদানের পাশাপাশি নিজেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু তিনি ভোটার হয়েছেন কি? তাঁর ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরি হয়েছে কি না?
সালাহউদ্দিন আহমদ : ২৭ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার হবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৫ তারিখ হচ্ছে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ২৬ তারিখ। শনিবার ২৭ তারিখ। নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের সব অফিস খোলা থাকে। সেদিনই এই ভোটার হওয়া, ভোটার আইডি বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড পাওয়াসংক্রান্ত যা কিছু আছে তিনি করবেন। সিইসির সঙ্গে মনোনয়নপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামিনে মুক্ত হওয়ার সার্টিফায়েড কপি দেওয়ার কথা হয়েছে, সেটি আরপিওতে নেই, সে বিষয়ে স্পষ্ট করতে বলেছি। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সার্টিফায়েড কপি যেন না দেওয়া লাগে, সেটি আমরা বলেছি।
প্রশ্ন : দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনদিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কীভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
সালাহউদ্দিন আহমদ : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের। আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। আমরা আশা করি নির্বাচনের পরিবেশ সুস্থ থাকুক। সরকারকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি এবং জনগণও চায় উৎসবমুখর পরিবেশে, স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে ভোট দেবে। সুতরাং আশা করি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হবে।
প্রশ্ন : আজকের দিনে দেশবাসী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান কী?
সালাহউদ্দিন আহমদ : দেশবাসীর প্রতি আহ্বান হলো- দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানের দল বিএনপিকে ভোট দিন। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আহ্বান হলো-জনগণের পাশে থাকুন। জনগণই সব শক্তির উৎস। আমরা শাসক নই, দেশবাসীর সেবক হতে চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশবাসীর সেবক।