চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান থেকে সংসদ নির্বাচন, তরুণ নেতৃত্বের কঠিন পরীক্ষা

ডেস্ক রিপোর্ট। || বিএমএফ টেলিভিশন

প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৬, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সর্বত্র এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সর্বত্র এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ছাত্রদের হাত ধরে গঠিত দলটি এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে, গত একটি বছর নিবন্ধন, দলীয় প্রতীক চূড়ান্ত করা আর নির্বাচনের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রস্তুতিতেই পার করেছে নতুন এই রাজনৈতিক শক্তি।

দলীয় সূত্র মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক বছর ধরে এনসিপি বড় ধরনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। দলটি প্রথম ধাপে ১২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যা তাদের নির্বাচনী রাজনীতিতে পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। ঢাকার বিভিন্ন আসনে দলের নেতাদের প্রচার-প্রচারণা নতুন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের জন্ম দিয়েছে। তবে, দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি জোটের রাজনীতিতেও পা রেখেছে দলটি; গঠন করেছে তিন দলীয় জোট। নির্বাচনের প্রয়োজনে মিত্রদের জন্য আসন ছেড়ে দিতেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি / ছবি- সংগৃহীত
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এক বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ওই দিন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও দ্রুততম সময়ে ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং রায়েরবাজারে চব্বিশের অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু করে দলটি। এরপর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিলেও এক বছরে দলটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি; কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত এখনও আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে কার্যক্রম।

গত ২২ জুন ‘শাপলা’সহ তিনটি প্রতীকের আবেদন নিয়ে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এরপরই শুরু হয় প্রতীকের লড়াই। শাপলা প্রতীকটি ‘জাতীয় প্রতীক’ হওয়ায় এবং অন্য একটি দলের দাবি থাকায় ইসি এটি বরাদ্দ না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। নাগরিক ঐক্যও কেটলির পরিবর্তে শাপলা দাবি করে। তবে, এনসিপিকে শাপলা দিলে আপত্তি থাকবে না বলে জানান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেছিলেন, ‘ওরা (এনসিপি) এ বিষয়ে আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদী। আমি তাদের (এনসিপি) বলেছি, শাপলা প্রতীক যদি তোমাদের দিয়েই দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি, কোনো মামলা করব না। আমি এখনও মনে করি, শাপলা প্রতীক হিসেবে সুন্দর।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক বছর ধরে এনসিপি বড় ধরনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে / ছবি- সংগৃহীত
শেষমেশ ‘শাপলা’ নয় বরং ‘শাপলাকলি’ প্রতীকে এনসিপির নিবন্ধন ও প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর দলের নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

দলটি রাজনৈতিক সংস্কার ও প্রচলিত দলীয় বন্দোবস্ত ভাঙার দাবি নিয়ে মাঠে নামার পর থেকেই আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে। অল্প সময়ে যেমন জনসমর্থন পেয়েছে, তেমনি জড়িয়েছে একাধিক বিতর্কেও। বিশেষ করে গত এক বছরে বিএনপি ও জামায়াতকে লক্ষ্য করে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ ছড়িয়েছে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতকেন্দ্রিক গতানুগতিক রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে আসছেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের গুঞ্জন দেশে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। গত ৮ মে রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার রায় না আসা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত আসার পর আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।

‘শাপলাকলি’ প্রতীকে এনসিপির নিবন্ধন ও প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর দলের নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন নাহিদ ইসলাম / ছবি- সংগৃহীত
তিন দলের নতুন জোট

বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি জোটে না গিয়ে এনসিপি কয়েকটি ছোট দল নিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠনের ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে এই জোট গঠিত হয়। এই জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাহিদ ইসলাম।

গত ১০ ডিসেম্বর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১২৫ আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে এনসিপি। তালিকায় উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন— নাহিদ ইসলাম: ঢাকা-১১, আখতার হোসেন: রংপুর-৪, সারজিস আলম: পঞ্চগড়-১, হাসনাত আবদুল্লাহ: কুমিল্লা-৪, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: ঢাকা-১৮, সারোয়ার তুষার: নরসিংদী-২, আব্দুল হান্নান মাসউদ: নোয়াখালী-৬, ডা. মাহমুদা আলম মিতু: ঝালকাঠি-১, নাহিদা সারওয়ার নিভা: ঢাকা-১২, আরিফুল ইসলাম আদীব: ঢাকা-১৬, ডা. তাজনূভা জাবীন: ঢাকা-১৭। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।

গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠনের ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম / ছবি- সংগৃহীত
কূটনৈতিক মহলে সক্রিয়তা

অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এনসিপি নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এসব বৈঠকে মানবাধিকার, সুশাসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। তবে, ভারতবিরোধী অবস্থানে এখনও অনড় দলটি। সম্প্রতি ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য ভূ-রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Share This Article

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়