বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমণে এসে স্রোতে ভেসে গেছে ঢাকার মাদরাসা ছাত্র হাফেজ মাহিত
আবু-হানিফ,বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ || বিএমএফ টেলিভিশন
বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনে ভ্রমণে এসে নদীর স্রোতে ভেসে গেছে মাদরাসা ছাত্র হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহ (১৫) নামে এক কিশোর। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্যের ডিমের চরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনে ভ্রমণে এসে নদীর স্রোতে ভেসে গেছে মাদরাসা ছাত্র হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহ (১৫) নামে এক কিশোর। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্যের ডিমের চরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ মাদরাসা ছাত্রের সন্ধ্যানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে কোস্টগার্ড ও বনরক্ষীরা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিখোঁজ হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহর কোন সন্ধ্যান মেলেনি। ঢাকার মীরপুর ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক নিখোঁজ মাদরাসা ছাত্রের বাবা ডা. শেখ সুলতান মাহামুদ আসাদ মোবাইল ফোনে কন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে ঢাকার পোস্তগোলা রোরো ফেরিঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ৭৫ জন পর্যটক নিয়ে এম ভি দ্য এক্সপ্লোরার নামের জাহাজটি সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
তিনি, তার স্ত্রী, চার ছেলে এবং তার ভাইয়ের পরিবারও ছিলেন জাহাজটিতে। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকেসুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশনে পৌঁছে বন বিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে কচিখালী অভয়ারণ্যের কটকার উদ্দেশে রওনা হই। পথিমধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে রাত্রি যাপন করে শনিবার সকালে সবাই ডিমের চরে নামি। অনেকেই ডিমের চরের নদীতে নেমে সাঁতার কাটছিলেন। আমি চার ছেলেকে নিয়ে নদীতে নামি। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা কূলে দাড়িয়ে দেখছিলেন। ছেলেরা কেউ হাটুপানি কেউ গলা পানিতে নেমে আনন্দ করছিলো। এ সময় হঠাৎ নদীর জোয়ারের একটি ঘূর্ণি ঢেউ এসে আমাদের সবাইকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।
তখন আমাদের চিৎকার শুনে দ্রুত লোকজন এসে গামছা ফেলে। সেই গামছা ধরে আমিসহ তিন ছেলে উঠতে পারলেও আমার মেজো ছেলে হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহ তলিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমিসহ পর্যটক দলের সদস্যরা নদীতে খোঁজাখুঁজি করেও ভেসে যাওয়া হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহর কোনো সন্ধান পাননি। মুহুর্তেই তাদের সব আনন্দ বিষাদে পরিনত হয়ে যায়।
মানসিক প্রশাস্তি আর আনন্দ উপভোগ করার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দরবনে এসেছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ আমার কপালে সইলোনা। আমার ছেলেটি কোরআনের হাফেজ। ছেলেটি এখন নারায়নগঞ্জের জামিয়াতুন নূর আলইসলা মিয়া মাদরাসার আলিমে পড়তো। সস্তান হারিয়ে ডিমের চরে মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা, মা, তিন ভাই ও পরিবারের সদস্যা। মর্মান্তিক এই ঘটনায় পর্যটক দলের সবার মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক ভাবে কোস্টগার্ড কচিখালী কন্টিনজেন্টের ও অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থলে জাল ফেলে ঘিরে রাখা হয়েছে। বিকালে কোস্টগার্ড মোংলা পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের ৬ সদস্যের একটি ডুবুরি দলও ঘটনাস্থলের পোঁছে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনে সকল স্টেশন ও জেলেদের কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোংলা নৌবাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।