বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে রাতের অভিযানে উদ্ধার অভিযান
টেকনাফে নৌবাহিনী–কোস্টগার্ড অভিযানে নারী-শিশুসহ ৩৯ জন উদ্ধার, আটক ২ পাচারকারী
আলমগীর আকাশ || বিএমএফ টেলিভিশন
কক্সবাজারের টেকনাফে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে অপহৃত নারী-শিশুসহ ৩৯ জনকে উদ্ধার এবং মানবপাচার চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া পাহাড়ের গহীনে এই অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৮ জন রোহিঙ্গা নারী, ১১ জন রোহিঙ্গা পুরুষ, ৮ জন রোহিঙ্গা শিশু এবং ২ জন বাঙালি পুরুষ। নৌবাহিনী সূত্রে জানা যায়, পাচারকারীরা প্রলোভন ও মুক্তিপণের মাধ্যমে এসব মানুষকে আটক রেখেছিল। উদ্ধারকৃতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আটক দুই পাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নৌবাহিনী জানিয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযানে মোট ১৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে নৌবাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে অপহরণের শিকার নারী ও শিশুসহ ৩৯ জন উদ্ধার এবং ০২ পাচারকারীকে আটক করা হয়।
গতকাল (০২-১০-২৫) দিবাগত রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নস্থ কচ্ছপিয়া পাহাড়ের গহিনে একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী ও মানবপাচারকারী চক্র কর্তৃক মুক্তিপণ আদায় ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে নারী ও শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আটকে রাখার সংবাদ পাওয়া যায়। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডসের কমান্ডোদলসহ কোস্টগার্ডের আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। এ সময় মানবপাচারকারী চক্র সদস্যরা অভিযানিক দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে ঘটনাস্থল থেকে ০২ জনকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে গহীন পাহাড়ের চিরুনি অভিযান চালিয়ে পাহাড়ের কয়েকটি স্থান হতে অপহরণের শিকার নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩৯ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৮ জন রোহিঙ্গা নারী, ১১ জন রোহিঙ্গা পুরুষ, ০৮ জন রোহিঙ্গা শিশু ও ০২ জন বাঙালি পুরুষ।
উদ্ধারকারীদের ভাষ্যমতে জানা যায় পাহাড়ে একটি সঙ্ঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দল বিভিন্ন সময়ে প্রলোভন দেখিয়ে ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে এনে গহীন পাহাড়ে আটকে রাখে। আটকে রাখাদের মধ্যে কারো কারো কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবী ও বিদেশে প্রেরণের কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর এবং আটককৃত মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং হতে ০২ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যৌথ অভিযানে সর্বমোট ১৩৪ জনকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা সমূহে মানব পাচার চোরাচালানসহ যে-কোনো ধরনের অপরাধ নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।