‘দে দে প্যায়ার দে ২’
প্রতিটি মুহূর্তই যেন নতুন এক চ্যালেঞ্জ
বিনোদন ডেস্ক || বিএমএফ টেলিভিশন
ঘন কুয়াশায় মোড়া লন্ডন শহরের এক কোণে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। এক হাতে কফির কাপ। চোখে কাজের ক্লান্তি, ঠোঁটে আঁকা এক মৃদু, রহস্যময় হাসি। তিনিই আশীষ; যার প্রেমের গল্প একবার বলিউডের দর্শকদের হাসি-কান্না-উত্তেজনায় মাতিয়ে দিয়েছিল। ২০১৯ সালে লভ রঞ্জনের ‘দে দে প্যায়ার দে’ যখন মুক্তি পায়, তখন তা শুধু একটি হিট কমেডি-রোমান্স ছবিই ছিল না; এটি ছিল একটি সামাজিক প্রথার ওপর করা হালকা-পাতলা, তীব্র আঘাত।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির (অজয় দেবগন) জীবনজুড়ে আসে ষোড়শী এক তরুণীর (রাকুল প্রীত সিং) প্রেম, আর জড়িয়ে থাকে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী (টাবু)-এর মতো এক জটিল চরিত্র। ছবিটি শেষ হয়েছিল এক মিষ্টি, আশাবাদী সমাপ্তিতে। আর প্রথম ছবির গল্প যেখান থেকে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে ‘দে দে প্যায়ার দে ২’-এর ক্যানভাস। প্রথম পর্বের পর ছয় বছর পেরিয়ে এসেছে। জীবন বদলেছে, সম্পর্কগুলো আরও গভীর হয়েছে, আর চরিত্রগুলো হয়ে উঠেছে আরও পরিণত। ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে।
ট্রেলারের সূচনাই হয় চমক দিয়ে রাকুল প্রীত সিং-এর আয়েশা এবার তাঁর মা-বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন প্রেমিক আশীষের (অজয় দেবগন) সঙ্গে। মেয়ের প্রেমিকের বয়স যে নিজেদের বয়সেরই কাছাকাছি, সেটি জেনেও প্রথমে মা-বাবা বেশ নিশ্চিন্তই থাকেন। সমস্যা শুরু হয় যখন তাদের সরাসরি মুখোমুখি হতে হয় সেই ‘বয়স্ক’ প্রেমিকের। দেখা-সাক্ষাৎ, কথোপকথন, আর একের পর এক সামাজিক অনুষ্ঠানে। প্রতিটি মুহূর্তই যেন নতুন এক চ্যালেঞ্জ। আশীষের প্রতি আয়েশার মা-বাবার প্রতিক্রিয়া, আর তার ফলে সৃষ্টি হওয়া ভুল বোঝাবুঝির জাল।
সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। আয়েশা ও আশীষের বন্ধন এবার পরীক্ষা দেবে শ্বশুরবাড়ির সামনে। এই সিকুয়ালের পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন অংশুল শর্মা, আর চিত্রনাট্য লিখেছেন লভ রঞ্জন ও তরুণ জৈন। এবারের কাস্টে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আয়েশার মা-বাবার চরিত্রে অভিনয় করছেন যথাক্রমে গৌতমী কাপুর এবং দক্ষিণ ভারতের সুপরিচিত তারকা আর. মাধবন।

‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’-এর পর রোমান্টিক কমেডিতে মাধবনের এই প্রত্যাবর্তন দর্শকের জন্য একটি বড় উপহার। ট্রেলার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মাধবন তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনও বাবার চরিত্রে অভিনয় করিনি, তাই বেশ নার্ভাস ছিলাম। বিশেষ করে অজয় দেবগনের মতো একজন তারকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সহজ নয়। আমি অনেক অভিনেতাকে দেখেছি; যারা সেটে এসে খুব ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু অজয় স্যার সবসময় সম্পূর্ণভাবে কাজের মধ্যে নিমজ্জিত থাকেন। তিনি অত্যন্ত মনোযোগী। সেটে আমরা সবাই এক ধরনের সংযোগ অনুভব করতাম।’
ছবিটির দৃশ্যায়ন হয়েছে পাঞ্জাবের সোনালি শস্যক্ষেত, লন্ডনের নিস্তব্ধ সকাল, আর দিল্লির প্রাণচঞ্চল রাস্তায়; যা গল্পটিকে দিয়েছে এক অনন্য, রঙিন প্রেক্ষাপট। সংগীতও দর্শকদের মনে জাগাবে নস্টালজিয়া। অরিজিৎ সিং ও শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে ‘তু মিলা তো ফির কেয়া খোয়া’ গানটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বা ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
২০২৫ সাল অজয় দেবগনের জন্য সিকুয়ালের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই বছরেই মুক্তি পেয়েছে ‘রেড ২’, যা বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছে। এখন ‘‘দে দে প্যায়ার দে ২’। সিকুয়াল তৈরির বিষয়ে অজয় দেবগন বলেন, ‘ভালো চিত্রনাট্য থাকলে আমি সিকুয়াল করতে আপত্তি করি না। আশা করছি দর্শক ছবিটি পছন্দ করবেন। সবাই বিশ্বাস করি, আমরা একটি ভালো ছবি তৈরি করেছি।’
মজার বিষয় হলো, ‘দে দে প্যায়ার দে ২’ মুক্তির আগেই তৃতীয় পর্বের আভাস দিয়েছেন অজয় ও চিত্রনাট্যকার-সহপ্রযোজক লভ রঞ্জন। লভ রঞ্জন মজা করে বলেন, ‘প্রথম পর্বে নায়কের বাড়ি, দ্বিতীয় পর্বে নায়িকার বাড়ি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তৃতীয় পর্বে দুই পরিবারকে একসঙ্গে আনব।’
অজয়ও হাসতে হাসতে যোগ করেন, সব ঠিকঠাক থাকলে ‘দে দে প্যায়ার দে ৩’-এ নিশ্চয় টাবু ফিরবেন, আর দুই পরিবার মিলেই হবে গল্পের পরিণতি। ‘দে দে প্যায়ার দে ২’ শুধু একটি সিনেমাই নয়, এটি একটি অনুভূতির ধারাবাহিকতা। এটি প্রমাণ করে যে প্রেমের কোনো বয়স হয় না, আর হাসি-কান্নার গল্প কখনোই পুরনো হয় না।